হাজিরা: ধৃতদের নিয়ে আদালতের পথে। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
বৃহস্পতিবার ডানকুনিতে দিল্লি রোডে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরে হুগলির কুখ্যাত সমাজবিরোধী টোটনের দলবল দাবি করেছিল, তারা টোটনের নিরাপত্তার জন্য তার পিছু নিয়েছিল। তাদের জেরার পরে তদন্তকারীদের অবশ্য দাবি, টোটনকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ছক ছিল তাদের। সে জন্য রীতিমতো তৈরি হয়েই তারা এসেছিল। রিভলভার বাদেও বস্তাভর্তি ধারালো অস্ত্র ছিল তাদের গাড়িতে।
ধৃত ৩৯ জনকে শুক্রবার শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হয়। ভিড় জমিয়েছিলেন ধৃতদের পরিজনেরা। চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি (২) শুভতোষ সরকারের নেতৃত্বে আদালত চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ধৃত সঞ্জয় সাহা, অভিজিৎ বসু, সনু হরিজনকে ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকিদের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। ধৃত এক গাড়িচালক উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বাসিন্দা।
ধৃতদের মধ্যে টোটনের ভাই রূপচাঁদও রয়েছে। কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘রূপচাঁদের কাছে রিভলভারের জাল লাইসেন্স ছিল নাগাল্যান্ডের। ওই দুষ্কৃতীদের হাত কতটা লম্বা, এতেই স্পষ্ট।’’ ওই পুলিশকর্তা জানান, দুষ্কৃতীদের থেকে ছ’টি আগ্নেয়াস্ত্র (দু’টি ইম্প্রোভাইজ়ড্ ম্যাগাজিন-সহ), বস্তাভর্তি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার এবং ছ’টি গাড়ি আটক করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ধৃতদের মধ্যে ১১ জন দাগী দুষ্কৃতী। তাদের বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি, ডাকাতির চেষ্টা, অস্ত্র রাখার মতো বহু মামলা রয়েছে হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলায়।
দিন কয়েক আগে চুঁচুড়া থানার হেফাজতে থাকা টোটন গুলিবিদ্ধ হয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। পুলিশ তাকে চুঁচুড়ায় আনছিল। পুলিশের কাছে খবর ছিল, টোটনের দলবল দিল্লি রোডে পুলিশের কব্জা থেকে টোটনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ বালির মাইতিপাড়ায় রেল সেতুর কাছে তৈরি ছিল। পুলিশ অফিসাররা সাদা পোশাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন। দুষ্কৃতীদের গাড়িগুলি টোটনের গাড়ির আগে-পরে ছিল। টোটনকে পুলিশের যে গাড়িতে আনা হচ্ছিল, তাতে থাকা অফিসারের সঙ্গে সারা রাস্তা যোগাযোগ রেখেছিলেন পুলিশকর্তারা।
মাইতিপাড়ার কাছে পুলিশ দুষ্কৃতী-দলটিকে ধাওয়া করে। পাছে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়, তা নিয়ে টোটনকে পাহারা দিয়ে আনা অফিসারেরা চিন্তায় পড়েন। অপারেশনে থাকা এক পুলিশ অফিসার জানান, এক সময় রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে ডানকুনি থানার আইসি তাপস সিংহ গতি বাড়িয়ে তাঁর গাড়ি ভাদুয়া মোড়ের কাছে রাস্তায় আড়াআড়ি ভাবে দাঁড় করিয়ে দেন। অন্য গাড়িতে থাকা এসিপি (২)-সহ অন্য অফিসাররা দুষ্কৃতীদের সব গাড়ি ঘিরে ফেলেন। দলে এক মহিলা অফিসারও ছিলেন। এরপর পুলিশ রিভলভার উঁচিয়ে দিল্লি রোডের উপরই একে একে দুষ্কৃতীদের গাড়ি থেকে নামতে বাধ্য করে।
তদন্তকারীদের ধারণা, দুষ্কৃতীদের দু’টি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, টোটনের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী তাকে আক্রমণের চেষ্টা করলে, তাদের ঠেকানো। দ্বিতীয়ত, সুযোগ বুঝে পুলিশের খপ্পর থেকে তাদের ‘বস’ টোটনকে মুক্ত করে গা-ঢাকা দেওয়া। তার প্রস্তুতি হিসেবেই আগ্নেয়াস্ত্র বাদেও জমিয়ে লড়ার জন্য এক বস্তা শান দেওয়া কাতান (বড় কাটারি জাতীয় অস্ত্র) রেখেছিল তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy