পরিবেশ দূষণের মোকাবিলায় রাজ্য সরকার উদাসীন বলে পরিবেশকর্মীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। শুক্রবার, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বিশেষ করে বেআইনি ইটভাটার দূষণ নিয়ে রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্টও।
আইনশৃঙ্খলা থেরে পুরভোট পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ইদানীং বারবার উচ্চ আদালতের তোপের মুখে পড়ছে রাজ্য সরকার। এ দিন সেই তালিকায় দূষণ নিয়ে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে যুক্ত করে সরকারের কর্মতৎপরতাকে তীব্র কটাক্ষ করেছে উচ্চ আদালত। জনস্বার্থে দায়ের করা একটি মামলায় রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সব বিষয়ে হাইকোর্টকে নির্দেশ জারি করতে হবে কেন? প্রশাসন কি নিজে থেকে কিছু করতে পারে না?’’ এটা অত্যন্ত ‘লজ্জার ব্যাপার’ বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ গত ১ জুন রাজ্যের পরিষদীয় সচিব নিয়োগ আইন খারিজ করে দেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘এখন তো আদালতই সরকার চালাচ্ছে!’’ হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের সেই ধাক্কা খাওয়ার চার দিন পরেই আদালত ফের চোখে আঙুল দিয়ে প্রশাসনিক গাফিলতি দেখিয়ে দিল বলে মনে করছেন হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ।
নবান্ন সূত্রের খবর, বেআইনি ইটভাটার দূষণ সংক্রান্ত একটি মামলায় ২০১২ সালে হাইকোর্ট রাজ্যের ভূমি দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিল, ‘স্ক্রুটিনি অ্যান্ড স্ক্রিনিং কমিটি’ গড়ে সব জেলায় বেআইনি ইটভাটা বন্ধ করে দিতে হবে। অথবা তারা যাতে পরিবেশ বিধি ও অন্যান্য আইনকানুন মেনে চলে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। ২০১৩ সালে ওই কমিটি গড়ার ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তিও জারি করে রাজ্য। সম্প্রতি বিপ্লব চৌধুরী নামে বিরাটির এক বাসিন্দা হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি মামলা দায়ের করে জানান, আদালত বেআইনি ইটভাটা নিয়ে যে-কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছিল, সেই কমিটি আসলে কোনও কাজই করছে না।
আবেদনকারীর আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় এ দিন আদালতে জানান, তথ্যের অধিকার আইনের সাহায্য নিয়ে মালদহ ও জলপাইগুড়ি জেলার ইটভাটাগুলি সম্পর্কে রাজ্যের ভূমি দফতরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওই দফতর বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, মালদহ জেলায় ১২৬টি বেআইনি ইটভাটা রয়েছে। এটাও জানা গিয়েছে, হাইকোর্ট যে-কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছিল, জলপাইগুড়ি জেলায় সেই কমিটিই গড়া হয়নি!
প্রধান বিচারপতি এর পরেই সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান, মালদহে বেআইনি ইটভাটাগুলি চলছে কী করে? সরকারি আইনজীবী জানান, ভূমি দফতর হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, বেআইনি ইটভাটাগুলি বন্ধ করতে হাইকোর্ট কোনও নির্দেশ দেয়নি। এ কথা শুনেই ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘সব বিষয়ে হাইকোর্টকে নির্দেশ জারি করতে হবে কেন? প্রশাসন কি নিজে থেকে কিছু করতে পারে না? কী লজ্জার ব্যাপার!’’ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী সরকারি আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘অন্য জেলার ইটভাটাগুলির অবস্থা কী?’’ সরকারি আইনজীবী জানান, সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে বিষয়টি জেনে তিনি আদালতকে জানাবেন।
ইটভাটার ব্যাপারে জেলা-ভিত্তিক সবিস্তার রিপোর্ট পেশ করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। ইটভাটা নিয়ে কী ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে, সরকার সেই সব অভিযোগ পেয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, ইটভাটার দূষণ বন্ধ করতেই বা রাজ্য কী করেছে— সবই জানাতে হবে রাজ্যকে। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ১০ জুলাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy