Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

ফিরে আসছে হেমন্ত, পিছু হটছে নিম্নচাপরেখা

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, আজ, বুধবার আকাশ আরও পরিষ্কার হবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

তার হদিস পেতে সংবাদপত্রের ‘হারানো-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশ’ স্তম্ভে বিজ্ঞাপন দিতে উতলা হয়ে উঠছিলেন অনেকে! কেননা ঋতুচক্রের অন্যতম সদস্য হলেও বেশ কিছু দিন ধরে তার খোঁজ নেই। জীবনানন্দের শহর কলকাতা থেকেই উধাও তাঁর প্রিয় ঋতু হেমন্ত। হাওয়ামোরগের আশ্বাস, নিম্নচাপ অক্ষরেখা দুর্বল হতেই হেমন্তের ফিরে আসার ইঙ্গিত মিলছে।

দু’দিন ধরে সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। ছিটেফোঁটা বৃষ্টির সঙ্গে জাঁকিয়ে বসছিল ভ্যাপসা আবহাওয়া। রাতের তাপমাত্রাও নামছিল না। তবে নিম্নচাপ অক্ষরেখার শক্তিক্ষয় শুরু হতেই মঙ্গলবার সকাল থেকে আবহাওয়া বদলাতে শুরু করেছে। ভোরে তাপমাত্রাও এক ধাক্কায় নেমেছে অনেকটা। এ দিন কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে দু’ডিগ্রি কম। মেঘ-রোদের খেলা চলেছে প্রায় সারা দিন। সকালের দিকে রোদ উঠলেও দুপুরের পরে ফের আকাশে হাজির হয়েছে মেঘ। আলিপুর হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, নিম্নচাপ অক্ষরেখা যে দুর্বল হচ্ছে, এগুলো তারই ইঙ্গিত।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, আজ, বুধবার আকাশ আরও পরিষ্কার হবে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে ২০ ডিগ্রির আশেপাশে। হেমন্তের নিশান হিম, হিম-হাওয়া। আবহবিদদের একাংশের আশ্বাস, এ বার হাওয়ায় মিলতে পারে সেই হিমেল ভাব।

প্রকৃতির তুঘলকিপনার জেরে শুধু কলকাতা নয়, সারা গাঙ্গেয় বঙ্গেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল হেমন্ত। গ্রীষ্মের দাপট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রলম্বিত হচ্ছিল বর্ষাও। উৎসবের দৌলতে শরতের ছোঁয়া কমবেশি অনুভব করা গেলেও হেমন্তকালটা যে কবে আসে আর কবে যায়, সেটা প্রায় ভুলতে বসেছিল এ-পার বাংলা। এ বারেও নিম্নচাপ, নিম্নচাপ অক্ষরেখা আর ঘূর্ণাবর্তের লাগাতার হামলায় বর্ষা বিদায়ের পরেও বৃষ্টি চলছে। ফলে শরতের হাত ধরে ভীরু পায়ে হেমন্তের আগমন অনুভব করার সম্ভাবনা নষ্ট হতে বসেছিল। আবহাওয়া দফতর বলছে, নতুন নিম্নচাপরেখার শক্তিক্ষয়ের সুবাদে মাঝ-কার্তিকে হেমন্তের আবির্ভাবের পথ খুলছে।

হেমন্তকে ফিরে পাওয়া গেলে কি এ বার আগাম শীত আশা করা যায়?

তেমন আশ্বাস দিতে রাজি নন আবহবিদেরা। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্ষার আসা বা যাওয়ার দিনক্ষণ অনেকটা নির্দিষ্ট থাকলেও শীতের তা নেই। বাতাসে পর্যাপ্ত শুষ্ক ভাব এবং রাতের তাপমাত্রা ধারাবাহিক ভাবে ১৪ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকলে তবেই শীতের আবির্ভাব ঘোষণা করা হয়। এ বার তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। গণেশবাবু জানান, নিম্নচাপরেখা দুর্বল হতে থাকায় উত্তর-পশ্চিমের শুকনো বাতাস ঢুকবে। ফলে আবহাওয়ায় শুকনো ভাব বাড়বে। সব মিলিয়ে হেমন্তের ছোঁয়া পাওয়া যেতে পারে।

রোগব্যাধির বাড়বাড়ন্ত রোধের আশ্বাস কিন্তু মিলছে না। ডাক্তারেরা বলছেন, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় মশার বংশবৃদ্ধি হয়তো আর তেমন হবে না। কিন্তু ঋতু বদলের এই সময়ে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। তাই যে-কোনও রোগজীবাণুই তাঁদের আক্রমণ করতে পারে। বাড়তে পারে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া সংক্রমণও। তবে ঠান্ডা পড়তে থাকলে মশার দৌরাত্ম্য কমবে, জীবাণুও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

‘‘অর্থাৎ আকাশ পরিষ্কার হয়ে পারদ যত তাড়াতাড়ি এবং যত বেশি নামে, ততই মঙ্গল,’’ বলছেন স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE