স্কুলের পথে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র
শুধু কী পরিকাঠামো, জেলার ইতিউতি গজিয়ে উঠা নামী, বেনামি বহু স্কুলের পঠন-পাঠন নিয়েও বহু অভিযোগ রয়েছে অভিভাবক, পড়ুয়াদের মধ্যে। পাঠ্যক্রম নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। অভিযোগ, ঠিক মতো ক্লাস হয় না। প়ড়াশোনার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কিন্তু কে করবে নজরদারি। অভিযোগই বা কোথায় জানানো যাবে। জানা নেই কারও।
ঘাটালের কুশপাতার এক অভিভাবক জানালেন, তাঁর ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। কাছে পিঠে নাকি তেমন ‘ভাল’ স্কুল নেই। তাই ছেলেকে ভর্তি করিয়েছেন আইসিএসসি অথবা সিবিএসসি-র ছাড়পত্র নেই এমন এক স্কুলে। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ওই অভিভাবকের কথায়, “একদিন ওকে পড়াতে গিয়ে বুঝতে পারলাম,কী ভুলটাই না করেছি।” কী ভুল? ওই অভিভাবকের কথায়, ‘‘প্রথমত সিলেবাস খুব বেশি। ভাল কথা। কিন্তু সবচেয়ে অসুবিধা হল, পড়াশোনা বিজ্ঞানসম্মত নয়। তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণিতে এমন ধরনের অঙ্ক বা ব্যাকরণ রাখা হয়েছে যা আরও দু’ক্লাস উঁচুতে গিয়ে শেখার কথা।’’ সমস্যা আরও রয়েছে। আরেক অভিভাবকের কথায়, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ শুধু সিলেবাসে ধরে ধরে পড়ান না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হোমওয়ার্ক দিয়ে দেন।’’ বহু ক্ষেত্রে ভুল বুঝতে পেরে অনেক অভিভাবক পঞ্চম শ্রেণিতে অন্য স্কুলে ভর্তির প্রস্তুতি নেন।
কিন্তু প্রতিবাদ করেন না কেন? অভিভাবকদের একাংশ বলছেন, অনুরোধ-উপরোধ থেকে প্রতিবাদ— কোনও কিছুতেই লাভ হয়নি। এক অভিভাবকের কথায়, “প্রতিবাদ করতে গিয়ে বরং উল্টো ফল হয়েছে। ছেলেকে বকুনি খেতে হয়েছে।” কেউ কেউ আবার নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কেমন হওয়া উচিত পাঠ্যক্রম? কেমন হওয়া উচিত শিক্ষাদানের পদ্ধতি? রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক তথা হিন্দু স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত বলেন, ‘‘যাঁরা পাঠদান করছেন তাঁদের যোগ্যতার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের পড়ানোর জন্য তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ রয়েছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। খেলাধুলোর মাধ্যমে পড়ানো হলে শিশুরা সহজেই অবগত হবে।স্কুলে এমন পরিবেশে খামতি থাকা চলবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সিলেবাস এমন হবে যাতে পড়ুয়াদের বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়। তাই সংশ্লিষ্ট বোর্ডের সিলেবাসের সঙ্গে তাল মিলিয়েই স্কুলগুলির সিলেবাস হওয়া জরুরি। তা না হলে শিশুমনে প্রভাব পড়বে।” সিলেবাসের বোঝা এবং অবৈজ্ঞানিক ভাবে পঠনপাঠনের ফলে শিশু মনে যে প্রভাব পড়ছে তা মানছেন চিকিৎসকেরাও। শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘স্কুলে বন্ধুদের চেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি এমন ধারণা তৈরি হওয়ায় শিশু মনে প্রভাব পড়ছে। তার জেরে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হচ্ছে। আচরণ পরিবর্তন হচ্ছে। শিশুদের ভবিষ্যতের তা ক্ষতিকারক।”
কেন এত অভিযোগ? নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে, সিলেবাস অনুযায়ী পড়ানোতে সমস্যা কোথায়? মেদিনীপুর শহরের এক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তা বললেন, “কমবেশি সব স্কুলেই নির্দিষ্ট একটি বোর্ডের সিলেবাস অনুয়ায়ী পড়াশোনা হয়। তবে এটাও ঠিক যে, বহু স্কুল বাড়তি কিছু চাপিয়ে দেয়। এর জেরে অনেক সময় সিলেবাস বিজ্ঞান সম্মত হয় না। তাই পড়ুয়াদের মনেও চাপ বাড়ছে-এটা ঠিক। কিন্তু বিষয়টি এতটা কেউ তলিয়ে দেখেনি।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নারায়ণ সাঁতরা বললেন, “সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ই শিক্ষা দফতরের নজরে আছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy