গ্রিন করিডর করে আনা হল হৃৎপিণ্ড। নিজস্ব চিত্র
কর্নিয়ার পাশাপাশি কিডনি এবং লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছে আগেই। এ বার পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালে প্রথম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হল। বাইরের চিকিৎসকদের সাহায্য ছাড়াই শনিবার তা করলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। গ্রহীতা রানিগঞ্জের বাসিন্দা আটত্রিশ বছরের রাখাল দাসকে রাখা হয়েছে কার্ডিয়োথোরাসিক অ্যান্ড ভাসকুলার সার্জারির আইটিইউয়ে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি বজবজের বাসিন্দা, বছর তিরিশের সৈকত লাট্টুর ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করা হয়। ঠিক হয়, সৈকতের দু’টি কিডনি পাবেন এসএসকেএম হাসপাতালেরই দুই রোগী এবং হৃৎপিণ্ড পাবেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের এক রোগী।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এসএসকেএম হাসপাতালে কি়ডনি এবং লিভার প্রতিস্থাপনের ছাড়পত্র থাকলেও হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অনুমতি ছিল না। মাস কয়েক আগে তাঁরা হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অনুমতি পান। তার পরই তাঁরা ‘কার্ডিয়াক’ রোগীদের (যাঁদের কোনও ভাবেই ওষুধে সুস্থ করা সম্ভব নয়) তালিকা তৈরি করেন। তালিকায় প্রথম নাম ছিল রাখালবাবুর।
আরও পড়ুন: আগুন সর্বোচ্চ বাড়িতে, ঠুঁটো দমকল বাহিনী
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, ‘ডায়লেটেড কার্ডিয়াক মায়োপ্যাথি’-র রোগী রাখালবাবু গত মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্বাস নিতে পারতেন না। হাঁটাচলাও প্রায় করতে পারতেন না। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় নেই।
শুক্রবার রাতে ঠিক হয়, শনিবার সকালে ‘গ্রিন করিডর’-এ এসএসকেএম থেকে সৈকতের হৃৎপিণ্ড নিয়ে যাওয়া হবে। এ দিন ভোর সাড়ে ৫ টায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের ডেপুটি সুপার জয়ন্ত সান্যালের নেতৃত্বে সাত জনের দল এসএসকেএম-এ যায়। হৃৎপিণ্ড নিয়ে ৯টা ৫৫ মিনিটে এসএসকেএম থেকে তাঁরা রওনা হন এবং ১০টা ২ মিনিটে মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছন। অস্ত্রোপচার শুরু হয় সাড়ে ১০টা থেকে।
হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, কার্ডিয়ো-থোরাসিক বিশেষজ্ঞ প্লাবন মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ছ’জনের দল রাখালবাবুর হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করেন। বিকেল ৩টে নাগাদ সেই হৃৎপিণ্ড কাজ করতে শুরু করে। তবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ, গ্রহীতার শরীরে যাতে কোনও সংক্রমণ না হয়। সে জন্য আলাদা করে তৈরি করা আইটিইউয়ে রাখালবাবুকে রাখা হয়েছে। শনিবার রাত পর্যন্ত তাঁর রক্তচাপ, পালস্ রেট স্বাভাবিক বলেই দাবি করেছেন চিকিৎসকেরা।
সৈকতের পরিবারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রাখালবাবুর স্ত্রী মামণি। তিনি জানান, স্বামীর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। মাস আটেক আগে তাঁর হাতের শিরায় সমস্যা দেখা দেয়, শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। বেঙ্গালুরুতে নিয়ে গেলে বলা হয়, হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করতে হবে। তারপরই তাঁরা রাখালবাবুকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসেন।
সৈকতের দু’টি কিডনি পেয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালেরই দুই রোগী। লিভারে সমস্যা থাকতে পারে বলে প্রতিস্থাপনের ঝুঁকি নেননি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। সৈকতের মামাতো ভাই বাপন মাঝি শনিবার বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে অঙ্গদানের কথা বলা হয়। আমরাও বুঝতে পারি, অনেকে উপকৃত হবেন আর অন্যদের শরীরে সৈকত বেঁচে থাকবে।’’
রাখালবাবু ছাড়া এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৪ জনের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হয়েছে। সব ক’টিই বেসরকারি হাসপাতালে। প্রথম প্রতিস্থাপনটি হয় গত মে মাসে দিলচাঁদ সিংহের শরীরে। এঁরা সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy