Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ছলছুতোয় টাকা নিতে বারণ স্বাস্থ্য কমিশনের

রোগীর পরিবার জানলই না। তাদের অন্ধকারে রেখে হরেক পরীক্ষানিরীক্ষা করে (বা না-করে) চিকিৎসার বিল ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা হল। এটা বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমের বড় রোগ। এ ভাবে ছুতোনাতায় বিল বাড়ানোর অভ্যাস থেকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে তাদের।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ১৫:০০
Share: Save:

• রোগীর পরিবার জানলই না। তাদের অন্ধকারে রেখে হরেক পরীক্ষানিরীক্ষা করে (বা না-করে) চিকিৎসার বিল ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা হল। এটা বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমের বড় রোগ। এ ভাবে ছুতোনাতায় বিল বাড়ানোর অভ্যাস থেকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে তাদের।

• দিনের শেষে বিল কত দাঁড়াল, তা নিয়মিত ই-পোর্টালে তুলে রাখতে হবে নার্সিংহোম ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে। রোগীর বাড়ির লোকজন কোন পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে ওই পোর্টালে ঢুকে বিলের পরিমাণ জানতে পারবেন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকেই।

বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির জন্য এই মর্মেই প্রথম নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন। অকারণ পরীক্ষানিরীক্ষা, যথেচ্ছ বিল বাড়ানো, নানান ছলছুতোয় প্যাকেজের বাইরে গিয়ে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে ক্রমাগত অতিরিক্ত টাকা আদায়— বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের প্রবণতায় রাশ টানতে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনকে নতুন চেহারা দিয়েছে রাজ্য সরকার। গড়া হয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন। চিকিৎসা পরিষেবায় স্বচ্ছতা আনতেই কমিশন এক গুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে।

মফস্সল ও গঞ্জের অধিকাংশ নার্সিংহোমে তো প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিন পরিকাঠামোই নেই। ওয়েবসাইট বা পোর্টাল সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই সাধারণ মানুষের। সেখানে কী ভাবে ওই নির্দেশ কার্যকর হবে?

‘‘সেখানে বিল সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য রোগীর শয্যার পাশে ঝুলিয়ে রাখতে হবে,’’ জবাব এক স্বাস্থ্যকর্তার। আগেকার ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনেও এই বিষয়টির উল্লেখ ছিল। কম্পিউটার-সাক্ষরতায় রাজ্যের ঘাটতির কথা মাথায় রেখেই সেটিকে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

বিলের পাশাপাশি চিকিৎসা পরিষেবার মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে হামেশাই। মূলত তার জেরেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভাঙচুর এবং চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এই ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রুখতে কমিশন বলেছে, রোগীর আত্মীয়স্বজনের অভিযোগ শুনতে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ‘পাবলিক গ্রিভান্স সেল’ রাখতেই হবে। সেই সেলের আধিকারিকের নাম, ফোন নম্বর এবং ই-মেল অর্থাৎ তাঁর সঙ্গে রোগীর পরিবার কী ভাবে যোগাযোগ করবেন, সেই তথ্য টাঙিয়ে রাখতে হবে হাসপাতালের একাধিক জায়গায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এখন সমস্ত পুলিশি জেরা ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখা বাধ্যতামূলক। একই ভাবে হাসপাতালের গ্রিভান্স অফিসারের সঙ্গে রোগীর পরিবারের কথোপকথন রেকর্ড করে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘পরবর্তী কালে কেউ কোনও নার্সিংহোমের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে বা ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে তদন্তের সময়ে সেই ভিডিও রেকর্ডিং অনেকটাই সাহায্য করবে।’’

নির্দেশিকায় কমিশন বলেছে, শয্যা ও কেবিনের ভাড়া, কোন পরীক্ষার কত চার্জ, প্যাকেজ থাকলে সেটা কত টাকার— সমস্ত তথ্য এমন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে, যাতে তা আমজনতার চোখে পড়ে। কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোম যদি ঘোষিত অঙ্কের চেয়ে বেশি টাকা আদায়ের চেষ্টা করে, সেই অভিযোগ জানানোর জন্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং ই-মেল আইডি-ও প্রকাশ্যে ঝোলানো আবশ্যিক করেছে স্বাস্থ্য কমিশন।

কিন্তু এ-সব দেখবে কে? কমিশনের কি সেই লোকবল আছে? প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিক ভাবেই।

কমিশন বলছে, জেলা স্বাস্থ্য দফতর নজরদারি চালাবে। হঠাৎ হঠাৎ পরিদর্শন করবে কমিশনও। তবে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে যাতে কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে, সেই সুযোগও থাকছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Commission Bill Private Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE