গোয়েন্দা নামিয়েও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা ‘টেট’-এর প্রশ্নপত্র লোপাটের রহস্য ভেদ করা যায়নি। সত্যিই প্রশ্নের প্যাকেট বাস থেকে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল, নাকি সেটা পরিকল্পিত অন্তর্ধান— সেই ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে। এই অবস্থায় আসন্ন টেটের আগে, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, স্থগিত পরীক্ষার উধাও প্রশ্নপত্রের প্রতিলিপি রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রের খবর, কাল, রবিবার রাজ্যের পাঁচ হাজার দু’শো কেন্দ্রে প্রাথমিকের টেট নেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩ লক্ষেরও বেশি। পরীক্ষার চলবে বেলা ২টো থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত। তার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা আগে, শুক্রবার আগের নির্ধারিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি দিব্যেন্দু বসাক।
আইনজীবী শিবিরের বক্তব্য, প্রশ্ন-বিভ্রাটের জেরে টেট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে নির্ধারিত তারিখে ওই নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা নতুন ভাবে তৈরি প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে। তার সঙ্গে পুরনো প্রশ্নপত্রের কোনও সম্পর্ক থাকার কথা নয়। লোপাট হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র ঠিক কী ও কেমন ছিল, সকলে যাতে তা জানতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার জন্যই সেই প্রশ্ন প্রকাশ করে দেওয়া দরকার।
অগস্টে নির্ধারিত তারিখে টেট নেওয়ার মুখেই প্রশ্নপত্রের একটি প্যাকেট খোয়া যাওয়ার ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিল। সেই ঘটনায় মামলাও হয়েছিল হাইকোর্টে। মামলার আবেদনকারীর বক্তব্য ছিল, ওই প্রশ্নপত্রের প্রতিলিপি সর্বসমক্ষে নিয়ে আসা দরকার। আদালত যাতে সেই মর্মে নির্দেশ দেয়, তার আর্জি জানানো হয়েছিল। আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য জানান, টেটের প্রশ্নপত্র উধাও নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। তার জেরে ৩০ অগস্টের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। সিআইডি তদন্ত করেও সেই প্রশ্নের প্যাকেটটি উদ্ধার করতে পারেনি। এ দিন সেই মামলার রায়েই প্রশ্ন প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
২৭ অগস্ট ডাক বিভাগের ভাড়া করা বাসে পরীক্ষা কেন্দ্রে টেটের প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার পথে প্রশ্নের একটি প্যাকেট খোয়া যায়। বাসের পিছন দিকের আচ্ছাদন সরে গিয়ে প্যাকেটটি রাস্তায় কোথাও পড়ে গিয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট রাস্তায় তন্নতন্ন করে খুঁজেও প্যাকেটটি পাওয়া যায়নি। বিরোধী শিবির প্রথম থেকেই অভিযোগ করছিল, এই ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র এবং শাসক দলের হাত আছে। বিরোধীদের সন্দেহ, ওই প্রশ্নপত্র আদৌ হারিয়ে যায়নি। বিপুল টাকার বিনিময়ে সেগুলো পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিলি করা হয়েছিল।
রহস্যভেদের জন্য তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি-কে। সেই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিরোধী শিবির। সিআইডি যে আইটিআই প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের কিনারা করতে পারেনি, সে-কথা তুলে বিরোধীরা বলতে থাকেন, আসলে প্রশ্নপত্র গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। এবং পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই তদন্তের জন্য আবার তলব করা হয়েছে ‘বশংবদ’ সিআইডি-কে। এই অভিযোগের মুখে গোয়েন্দারা তদন্ত চালিয়েও প্রশ্ন লোপাট রহস্য ভেদ করতে পারেননি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন প্রকাশের ব্যাপারে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধীরা। মেদিনীপুরে ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্মেলন চলছে। এ দিন সেখানে সাংবাদিক বৈঠক করে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ অভিনন্দনযোগ্য।’’ সেই সঙ্গে টেট পরীক্ষার্থীদের ‘অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন’ (ওএমআর) শিট দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। জামিরের প্রশ্ন, “পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিট দেওয়া হবে না কেন? দেওয়া হলে দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না, তাই? আমরা চাই, ওএমআর শিট পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হোক। পরীক্ষার নামে প্রহসন বন্ধ হোক।” টেটের দিন বাড়তি সরকারি বাস নামানোর দাবিও জানিয়েছে ডিওয়াইএফ।
উধাও হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র প্রকাশ নিয়ে আদালতের নির্দেশের পরে কী বলছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ?
‘‘রায়ের প্রতিলিপি এখনও হাতে পাইনি। পেলে আদালত যা বলেছেন, তা-ই করা হবে,’’ বলেছেন পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy