Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ছুটিতে কাজ করে অন্যদের শেখানোর রাস্তায় চেল্লুর

আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও। আপ্তবাক্য মেনে এ বার নিজেই শনিবার, ছুটির দিনে কাজ করতে চাইছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। পরকে শেখানো মানে হাইকোর্টে কর্মবিরতির স্রোতে গা ভাসানো কৌঁসুলিদের কাজের রাস্তায় আনা।

মঞ্জুলা চেল্লুর

মঞ্জুলা চেল্লুর

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও।

আপ্তবাক্য মেনে এ বার নিজেই শনিবার, ছুটির দিনে কাজ করতে চাইছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। পরকে শেখানো মানে হাইকোর্টে কর্মবিরতির স্রোতে গা ভাসানো কৌঁসুলিদের কাজের রাস্তায় আনা। সেটা কতটা সম্ভব হবে, সময়ই বলবে। তবে শুক্রবার প্রস্তাবটি উচ্চারণ করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চেল্লুর পাশে পেয়ে গিয়েছেন বিচারপতি ও কৌঁসুলিদের একাংশকে। যদিও ঠিক কোন শনিবার থেকে উচ্চ আদালতে কাজ হতে দেখা যাবে, সেটা চূড়ান্ত হয়নি।

হাইকোর্টে কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে এত দিন বারে বারেই সরব হয়েছেন প্রধান বিচারপতি। যখন-তখন যে-কোনও ছুতোয় যে-ভাবে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়, তা বন্ধ করতে অনুরোধ-উপরোধ করেছেন। তাতে বিশেষ কাজ না-হওয়ায় ক্ষোভ, উষ্মা, খেদ প্রকাশ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উল্লেখ করে বছরে কমপক্ষে ২১০ দিন হাইকোর্ট চালু রাখার কাজে সহযোগিতা চেয়েছেন আইনজীবীদের কাছে। সেই ধারাবাহিক প্রয়াসের অঙ্গ হিসেবেই প্রধান বিচারপতি এ দিন জানান, তিনি শনিবারের ছুটিতেও কাজ করতে চান। আইনজীবীদেরও প্রস্তাবটি ভেবে দেখতে বলেন। শুনে আইনজীবীদের একাংশ জানান, প্রধান বিচারপতি যখন চাইছেন, তখন তাঁরাও শনিবার কাজ করবেন।

শনিবার কী ধরনের মামলার কাজ হতে পারে, সেই বিষয়েও নিজের ভাবনাচিন্তার কথা জানান প্রধান বিচারপতি। তাঁর প্রস্তাব, বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বেশ কিছু জনস্বার্থ মামলার শুনানি হোক শনিবারে। তাঁর ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীও জানান, শনিবার কাজ করতে তাঁর অসুবিধে নেই।

প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকেই মনে করছেন, ছুটির দিনে কাজ করার প্রথা চালু হলে কলকাতা হাইকোর্টের দুর্নাম ঘুচবে। বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ছুটির দিনেও কাজ করার জন্য আইনজীবীরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত হলে তার থেকে ভাল তো আর কিছু হয় না। বিদেশে আইনজীবী ও বিচারপতিরা প্রয়োজনে ছুটির দিনেও কাজ করেন। শুভবুদ্ধির সূচনা হচ্ছে জেনে ভাল লাগছে।’’

শুভবুদ্ধির অভাবের ব্যাপারটা আইনজীবীদের একাংশকে অন্তত বেশ কিছু দিন ধরেই পীড়া দিচ্ছিল। মামলার পাহাড় জমছে। বিচারপ্রার্থীরা দূরদূরান্ত থেকে এসেও বিচার না-পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ নানান কারণ দেখিয়ে কর্মবিরতির ডাক দিচ্ছিলেন আইনজীবীরা। বিশেষ করে কোনও সহকর্মীর মৃত্যুতেও আইনজীবীদের কর্মবিরতি পালন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধান বিচারপতি বার অ্যাসোসিয়েশন-সহ আইনজীবী সংগঠনগুলিকে অনুরোধ করেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বছরে কমপক্ষে ২১০ দিন হাইকোর্টের কাজ চালু রাখার জন্য তাঁরা সকলেই এগিয়ে আসুন। সেই নির্দেশ মানতে হলে শনিবার কাজ করা দরকার। কর্মবিরতির দরুন কর্মদিবসের সংখ্যায় যে-ঘাটতি দেখা দেয়, শনিবার কাজ করে তা পুষিয়ে দিতে বলেছিলেন চেল্লুর। কিন্তু আইনজীবী সংগঠনগুলি রাজি হয়নি। তবে কৌঁসুলিদের একাংশ যখন-তখন কাজ বন্ধের ডাকে কখনওই সায় দেননি। কর্মবিরতির মধ্যেও বিভিন্ন বিচারপতির এজলাসে কাজে যোগ দিয়ে তাঁরা তার প্রমাণও দিয়েছেন।

শনিবারের ছুটিতে কাজ করার প্রসঙ্গটি এ দিন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠল কী ভাবে?

প্রধান বিচারপতি চেল্লুর কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলাগুলির শুনানি আলাদা কোনও বেঞ্চে করার কথা ভাবছেন তিনি। এমনই একটি মামলা এ দিন তাঁর আদালতে উঠলে আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী অনুরোধ করেন, আলাদা বেঞ্চ নয়। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চেই লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলির শুনানি হোক।

প্রধান বিচারপতি তখন জানান, এই ধরনের মামলা ছাড়াও তো অন্য সব জনস্বার্থ মামলা রয়েছে তাঁর বেঞ্চে। সপ্তাহের নির্ধারিত পাঁচটি কাজের দিনে তিনি লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার জন্য আলাদা সময় বার করতে পারবেন না। তার পরেই প্রধান বিচারপতি জানান, যদি আইনজীবীরা রাজি থাকেন, তা হলে শনিবার তিনি সময় দিতে পারেন। সম্মতি জানান বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীও।

আদালতে হাজির ‘সিকিওরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া’ বা সেবি-র আইনজীবী রাজশেখর মান্থা এবং অন্য আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতিকে জানান, বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার কয়েক হাজার আমানতকারীর স্বার্থের কথা চিন্তা করে তাঁরাও শনিবার হাইকোর্টে এসে মামলা লড়তে রাজি আছেন।

তখন আদালতে ছিলেন রাজ্যের স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল তথা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রণব দত্ত। অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে যে-সব মামলা দায়ের হয়েছে, সেগুলোতে রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করছেন তিনি। প্রণববাবুও প্রধান বিচারপতিকে জানান, শনিবার কাজ করতে তাঁর ব্যক্তিগত কোনও অসুবিধে নেই। তবে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদ (৩১ জুলাই) না-ফুরোনো পর্যন্ত যেন শনিবারে কাজ করার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব কার্যকর না-হয়।

প্রধান বিচারপতি এর পরেই আইনজীবীদের জানান, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শনিবার কাজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE