বুদ্ধ এই বাংলাতেও আছেন। জানেন কি! এমনকী তিনি আছেন মহানগর কলকাতাতেই। জানেন কি!!
ব্যাঙ্কক শহরে স্বর্ণবুদ্ধের মন্দির, হেলান দেওয়া বুদ্ধের মন্দির সন্ধানী পর্যটকদের অবশ্য দ্রষ্টব্য। অথচ কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে যে স্বয়ং বুদ্ধদেবের দাঁত সংরক্ষিত আছে, খুব বেশি মানুষ তা জানেন না। তাঁদের সেটা জানাতে এবং পশ্চিমবঙ্গে আরও বেশি পর্যটক টানতে তাই এ বার ‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি’।
বুদ্ধ-স্মারক সংরক্ষিত আছে বা প্রাচীন যুগে বৌদ্ধধর্মের নিদর্শন মিলেছে, পশ্চিমবঙ্গের এমন সব জায়গাকে ঘিরে ‘হেরিটেজ পর্যটন’-এর প্রস্তাব এল কলকাতার একটি সভায়। ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে ওই সভার আয়োজক ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
শ্রীলঙ্কা থেকে আগত (এখন ভারতের মহাবোধি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক) ভান্তে সেভালি থেরো শুক্রবার ওই সভায় বলেন, ‘‘কলকাতায় বুদ্ধের স্মারক (জাদুঘরে সংরক্ষিত দাঁত) আছে জানতে পারলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বহু মানুষ শুধু এর জন্যই এখানে ভিড় করবেন।’’ তাঁর প্রস্তাব, রাজ্যের যে-সব জায়গায় পুরাতাত্ত্বিক খননে বৌদ্ধধর্মের প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে, সেই সমস্ত জায়গায় ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হোক। সেগুলোর টানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে ভিড় করবেন।
আরও পড়ুন: শিনার মুখে চেপে বসেছিল ইন্দ্রাণী, দাবি চালকের
পাঁচটি বৌদ্ধমঠ আছে দার্জিলিং জেলায়। মালদহের জগজীবনপুর, বাঁকুড়ার ভরতপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের মোগলমারি, পূর্ব মেদিনীপুরের কঙ্কণদিঘি, মুর্শিদাবাদের কর্ণসুবর্ণে মিলেছে বৌদ্ধধর্মের প্রাচীন নিদর্শন। বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা তিন লক্ষেরও বেশি। আবার পশ্চিমবঙ্গ ঘেঁষা নেপাল, ভুটান এবং কিছুটা দূরে মায়ানমারের মতো দেশে ওই ধর্মের মানুষ তো অসংখ্য।
অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম-এর আহ্বায়ক রাজ বসু জানান, ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৫২ লক্ষের কিছু বেশি। ২০১৬-য় তা সাত কোটি ছাড়িয়েছে। ‘‘এঁদের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর হার ০.০১ শতাংশও নয়! তবু পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। তাই রাজ্যের বৌদ্ধ পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে কলকাতায় প্রতি বছর পর্যটন উৎসব হোক,’’ প্রস্তাব দিয়েছেন রাজবাবু।
এশিয়াটিক সোসাইটির কিউরেটর কেকা বন্দ্যোপাধ্যায় অধিকারীর মতে, পরিকাঠামো উন্নত না-করলে পর্যটন-পরিকল্পনা রূপায়ণ করা মুশকিল। যে-সব জায়গায় প্রাচীন নিদর্শন মিলেছে, সেখানে ধর্মশালা, হোটেল, মোটেল দরকার। স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে গাইডের কাজ করতে পারেন, সেই জন্য তাঁদের ইতিহাস জানাতে হবে, তাঁদের বিভিন্ন ভাষায় বলিয়ে-কইয়ে করে তুলতে হবে। ওই সব জায়গার প্রচারে রেল স্টেশন, হোটেল এবং বিমানবন্দরে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন কেকাদেবী।
অনেক জায়গাতেই প্রাচীন স্থাপত্য থেকে ইট খুলে নেওয়া হচ্ছে। ঘুঁটে দেওয়া হচ্ছে স্থাপত্যের দেওয়ালে! অনেক ক্ষেত্রে পুরাকীর্তি দেখতে গিয়ে চাবির খোঁজ মেলে না!! রাজবাবুর আশা, পর্যটনের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সামিল করতে পারলে এই সব সমস্যার সুরাহা হবে।
‘‘এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৌদ্ধ ধর্ম ও শিল্প-সংস্কৃতিকে সামনে রেখে আমরা এ রাজ্যে পর্যটনের রূপরেখা তৈরির কাজে হাত দিয়েছি,’’ বলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy