আশা ছিল রাজস্ব বাড়বে। প্রথম দু’মাস বেড়েওছিল। কিন্তু কেন্দ্র জিএসটি আদায়ের নিয়মে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করায় চাপে পড়েছে রাজ্য। গত তিন মাস ধরে রাজ্যের নিজস্ব জিএসএটি বা এসজিএসটি আদায় কমতে শুরু করেছে। গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত ভ্যাট ও অন্যান্য কর আদায়ের নিরিখে যে পরিমাণ জিএসটি আদায় হওয়ার কথা, তার চেয়ে ২৫০ কোটি টাকা কম আয় হয়েছে। বাধ্য হয়ে বাণিজ্য করকর্তাদের দিয়ে তল্লাশি অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে নবান্ন। যদিও জিএসটি চালুর সময়ে কর-অফিসারদের ‘সক্রিয়তা’ থাকবে না বলেই প্রচার করেছিল সরকার।
ঠিক হয়েছে, যে সব ব্যবসায়ী জিএসটি রেজিস্ট্রেশন করার পরেও কর দিচ্ছেন না, তাঁদের কর কাঠামোর মধ্যে আনা হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের যে অংশ ভিন্ রাজ্য থেকে জিএসটি ফাঁকি দিয়ে নগদে পণ্য নিয়ে আসছেন বা পাঠাচ্ছেন, তাঁদেরও ধরপাকড় করা হবে। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটকে ইতিমধ্যেই তল্লাশি চলছে। এ রাজ্যেও সেই পথে হাঁটার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’
অর্থ দফতরের দাবি, রাজ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ ব্যবসায়ী ভ্যাট দিতেন। জিএসটি চালু হওয়ার পর আরও প্রায় দেড় লক্ষ ব্যবসায়ী রেজিস্ট্রেশন করান। ফলে আশা করা হচ্ছিল ভ্যাটের তুলনায় আদায় অনেকটা বাড়বে। জুলাই-অগস্ট মাসে অনেক বেশি সংখ্যক ব্যবসায়ী জিএসটি রিটার্ন জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র নিয়মে কিছুটা ছাড় দিতেই অনেকে আর কর দিচ্ছেন না। অন্য দিকে জিএসটি ব্যবস্থা এড়িয়ে ভিন্ রাজ্য থেকে নগদে মাল এনে ‘কাঁচা কারবার’ করছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। রাজ্যের প্রবেশ পথে চেকপোস্ট উঠে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন পরিবহণ মালিকদের অনেকে।
আরও পড়ুন: শানু পেল ২৬ লক্ষ টাকার লটারি! সরগরম চাকদহ
এই পরিস্থিতিতে যে সব ব্যবসায়ী জিএসটি চালুর পর রিটার্ন দিয়েও বন্ধ করে দিয়েছেন, প্রথম দফায় তাঁদের নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ, রিটার্ন জমা করার প্রযুক্তিগত সমস্যা এখন আর নেই। ফলে কর দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অনেকে আবার ভ্যাট জমানার ইনপুট এখন দাবি করে কর দেওয়া এড়াচ্ছেন। তাঁদেরও নোটিস দেওয়া হচ্ছে। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ি এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের দোকানে তল্লাশি চালানোর প্রস্তুতিও চলছে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্র যখন আগামী পাঁচ বছর জিএসটি আদায় কম হলে ক্ষতিপূরণ দেবেই, তখন কেন তৎপর হচ্ছে নবান্ন? প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, জুলাই-অগস্টে ৪৪১ কোটি এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ৫৭০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ মিলেছে। কিন্তু এখন নজরদারিতে ঢিলে দিলে দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব তলানিতে ঠেকবে। কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ দেওয়া বন্ধ করার পরে বিপাকে পড়বে রাজ্য। কারণ, এখন বলতে গেলে জিএসটি-ই রাজস্ব আদায়ের একমাত্র সূত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy