Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

পঠনপাঠন ও গবেষণার ঝাঁপি নিয়ে বিদেশি ছাত্রের অপেক্ষায় জার্মানি

ভিনদেশি কেউ সেখানে পড়তে গেলে তাঁর থাকা-খাওয়ার খরচ লাগবে। কিন্তু পঠনপাঠন সম্পূর্ণ নিখরচায়। লিখছেন সাবেরী প্রামাণিক। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য।ভিনদেশি কেউ সেখানে পড়তে গেলে তাঁর থাকা-খাওয়ার খরচ লাগবে। কিন্তু পঠনপাঠন সম্পূর্ণ নিখরচায়। লিখছেন সাবেরী প্রামাণিক। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য।

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:১৮
Share: Save:

উচ্চশিক্ষার জন্য পাঁচ বছর ধরে জার্মানিতে আছেন দিল্লির যতীন নাগপাল। বর্তমানে গেটে (Goethe) বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত ওই ভারতীয় ছাত্র দেশে ফেরার কথা ভাবছেন না এখনই। কিন্তু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক আমেরিকা কিংবা ইংল্যান্ডে না গিয়ে জার্মানি পাড়ি দিলেন কেন? জার্মানির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল, সেখানকার পড়াশোনার খরচ। হিটলারের দেশে উচ্চশিক্ষার কোনও খরচই নেই। ভিনদেশি কেউ সেখানে পড়তে গেলে তাঁর থাকা-খাওয়ার খরচ লাগবে। কিন্তু পঠনপাঠন সম্পূর্ণ নিখরচায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, হস্টেল খরচ, পরীক্ষার ফি বাবদ যে অর্থ দিতে হবে, তা-ও আমেরিকা, ইংল্যান্ডের তুলনায় অনেকটাই কম বলে দাবি জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা সংস্থার কর্ণধারদের।

সায়েন্স সিটিতে জার্মানির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি শিক্ষামেলার আয়োজন করে। সেখানে খোদ কনসাল জেনারেল খানিকটা আক্ষেপের সুরেই জানিয়েছিলেন, যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও জার্মানিতে পড়াশোনা করতে আসার ঝোঁক তেমন নেই। ঝোঁক যাতে বাড়ে, সে জন্য সম্প্রতি গোটা বিশ্বের ১৫টি দেশের ১৭ জন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ করে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার হাল হকিকত জানাতে উদ্যোগী হয়েছিল জার্মানির বিদেশ মন্ত্রক। সপ্তাহব্যাপী সেই উদ্যোগে জানা গেল, মূলত বিজ্ঞানের পঠনপাঠন গবেষণায় জার্মানিতে সুযোগ কতটা বিস্তৃত। তারই কিছু সন্ধান দেওয়া হল এই প্রতিবেদনে।

গবেষণা

স্কলারশিপ দিয়ে ভাল গবেষণাকে উত্‌সাহিত করে জার্মানির বেশ কিছু সংস্থা। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চলা এই সব সংস্থা চলে নিজস্ব নিয়মে। সেখানে একমাত্র বিচার্য হয় গবেষণার মান। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল:

১) ‘ডিএএড’ বা সংক্ষেপে ‘ডাড’। জার্মান বিদেশ মন্ত্রকের অনুদানে পরিচালিত ‘ডাড’ বছরে ৮০ হাজার স্কলারশিপ দেয়। ভারতে পুণে, চেন্নাই এবং দিল্লিতে এর অফিসও আছে। স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য ডাড-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিতে হয়। তবে ব্যক্তিগত ভাবে নয়, আবেদন জানাতে হবে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। ওয়েবসাইট: www.daad.de এবং www.daaddelhi.org

২) আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ডট ফাউন্ডেশন। এই সংস্থার স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে আবেদন জানাতে হয়। এরা আবেদনকারীর নিজস্ব কাজ বিচার করে স্কলারশিপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওয়েবসাইট: www.humboldt-foundation.de

৩) ম্যাক্স প্লাঙ্ক সোসাইটি। সরকারি অনুদানে চলা এই সংস্থা মূলত বিজ্ঞান গবেষণার কাজে অর্থসাহায্য দেয়। এখানকার গবেষকদের অনেকে নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। ওয়েবসাইট: www.mpg.de

বস্তুত, জার্মানির উচ্চশিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের দেশের, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের অনেক মিল আছে। জার্মানিতেও প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থাগুলিকে এক জায়গায় না আনলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের র‌্যাঙ্কিংয়ে ভাল নম্বর কোথা থেকে আসবে? এখানেও এই প্রশ্ন হামেশাই শোনা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশের মতো নিয়মিত কাজে এত বেশি জড়িত যে গবেষণার সুযোগ সেগুলিতে খুব বেশি নেই। কিন্তু গবেষণার জন্য পৃথক সংস্থার কী প্রয়োজন, সেই প্রশ্ন এখানেও খুবই প্রাসঙ্গিক।

দু’-একটি উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়:

১) ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয়, বার্লিন (Freie Universitat, Berlin)। জার্মানিতেও আমাদের মতো রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি অনুদানে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ফারাক আছে। এটি একটি রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পঠনপাঠন এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানালেন, মোট ২৮ হাজার ৫০০ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১৬ শতাংশই অন্যান্য দেশ থেকে আগত। স্নাতক স্তরে ৯৯ শতাংশ পাঠ্যক্রমেই পড়াশোনা হয় জার্মান ভাষায়। তবে স্নাতকোত্তরে ইংরেজিতেই পঠনপাঠনের চল বেশি।

২) গেটে বিশ্ববিদ্যালয় (Goethe University)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত স্বাস্থ্য, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, পরিবেশ, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে পঠনপাঠন হয়। প্রচুর বিদেশি ছাত্রছাত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষের হিসেব অনুযায়ী, ৪৬ হাজার ৫০০ পড়ুয়ার মধ্যে বিদেশি ছাত্রের সংখ্যা সাত হাজার। টিউশন ফি নেই। ভর্তির সময় লাগে সাড়ে তিনশো ইউরো। স্নাতকস্তরের প্রায় সব পাঠ্যক্রমই জার্মানিতে হলেও উঁচু ক্লাসে ক্রমশ ইংরেজির ব্যবহার বাড়ে। প্রায় ৯০ শতাংশ গবেষণার কাজই হয় ইংরেজিতে।

এ ছাড়া, জার্মানির হামবোল্ট, হাইডেলবার্গ, ড্রেসডেন ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও পঠনপাঠন-গবেষণার দিক থেকে যথেষ্ট এগিয়ে। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তালিকায় অনেক সময়েই জার্মানির প্রতিষ্ঠানগুলি ঠাঁই পায়। তবে সেখানকার শিক্ষাকর্তারা জানালেন, তাঁরা ইঁদুর দৌড়ে বিশেষ সামিল হতে চান না। বরং কাজ ও পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা প্রচার করে আপাতত দেশ-বিদেশ থেকে ছাত্র সংগ্রহই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE