—প্রতীকী ছবি।
রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতরের অফিসারদের যোগসাজশে রীতিমতো দুষ্টচক্র গড়ে তারা দুষ্কর্ম চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে সেই চক্রের সাত জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তকারীরা জানান, চাকরির লোভ দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নতুন নয়। তবে এই চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল সরকারি রাঘববোয়ালদের সঙ্গ পেয়ে। চক্রের সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রের কোন কোন অফিসারের যোগ আছে, ধৃতদের জেরা করে তা জানার চেষ্টা চলছে।
সিআইডি জানায়, সেনাবাহিনী, পুলিশ, পরিবহণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকরির পাশাপাশি রেলের চতুর্থ শ্রেণির চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ ফেলে চক্রটি মাস দুয়েক ধরে টাকা হাতাচ্ছিল। খবর পেয়েই সব জেলার গোয়েন্দাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, চক্রটি পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বিশেষ ভাবে সক্রিয়। সরকারি চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়। সেই তদন্তে পটাশপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রতারণা চক্রের মূল পান্ডা জয়ন্ত ঘড়ুইকে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, জয়ন্তকে জেরা করে জানা যায়, প্রতারণা চক্রটি সারা রাজ্যেই সক্রিয়। সরকারি চাকরি দেওয়ার নাম করে বেকারদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। শুক্রবার সিআইডি-র কয়েকটি দল পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদের বহরমপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর থেকে প্রতারণা চক্রের আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করে। গোয়েন্দারা জানান, ধৃত জয়ন্ত মণ্ডল (সাগর), গুণধর মান্না (গড়বেতা), অমিয় পাল (নন্দীগ্রাম), স্বপন মণ্ডল (বহরমপুর), সুকুমার দিন্দা (পটাশপুর) ও নিত্যনন্দ দাস (ঝাড়গ্রাম)-কে আজ, শনিবার আদালতে তোলা হবে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে গোয়েন্দারা জানান, ওই চক্রের সদস্য-সংখ্যা শতাধিক। তারা গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতিটি জেলায় দায়িত্বে রয়েছে এক জন সদস্য। সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেকারদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা নেওয়া হত। বেকারদের কাছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা তুলে ধরার জন্য তাঁদের কাছ টাকা নেওয়ার পরে ভুয়ো শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ারও ব্যবস্থা করত চক্রের পান্ডারা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, আবগারি দফতরে চাকরি-প্রার্থীদের দৌড়-সহ নানা শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হয়। সেই পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ শিবির চালাত ওই চক্র। কখনওই একসঙ্গে পুরো টাকা নেওয়া হত না। বেকারদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হত ধাপে ধাপে। প্রথম দফায় মোটামুটি চার লক্ষ টাকা নেওয়া হত। প্রশিক্ষণ চলাকালীন বাকি টাকা আদায় করত চক্রের লোকজন।
‘‘এই প্রতারণা চক্রের জাল অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ধৃত সাত জনকে জেরা করে জাল গুটিয়ে আনার চেষ্টা চলছে,’’ বললেন ডিআইজি (সিআইডি-অপারেশন) নিশাদ পারভেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy