মৃতদেহের স্তূপ: বিষমদের বলি। ফাইল চিত্র
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিষমদ-কাণ্ডে ১৭২ জনের মৃত্যুর মামলায় চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করল আলিপুর আদালত। বিষমদে মৃত্যুর ঘটনায় এ রাজ্যে প্রথম কাউকে দোষী সাব্স্ত করা হল বলে জানিয়েছেন মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায়।
মূল অপরাধী নুর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশা, নজরুল লস্কর, দুখে লস্কর ও গিয়াসুদ্দিন লস্করকে বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত করেছেন আলিপুর আদালতের (৬) অতিরিক্ত দায়রা বিচারক পার্থসারথি চক্রবর্তী। মামলায় ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তথ্য প্রমাণের অভাবে খোঁড়া বাদশার স্ত্রী সাকিলা বিবি, আয়ুব আলি লস্কর, গিয়াসউদ্দিন লস্কর, খইরুলনেশা বেওয়া, মইউদ্দিন গাজি ও রবিউল লস্করকে বেকসুর খালাস করেছে কোর্ট। অভিযুক্ত আতিউল লস্কর ও ইয়াসিন জমাদার এখনও পলাতক বলে জানান সিআইডির তদন্তকারীরা অফিসার শিমুল সরকার।
বিষাক্ত চোলাই খেয়ে ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট, উস্তি ও মন্দিরবাজারে ১৭২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তিন থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতের পরিজনদের ২ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: এ বার মেয়রের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু!
সরকারি আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, মামলায় সাক্ষী ছিলেন ৫৬ জন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ (অনিচ্ছাকৃত খুন) ৩২৬ (ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত), ৩২৮ (ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষ খাইয়ে মানুষ মারা), ২৭৩ (ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনও জিনিসের সংমিশ্রণ ঘটানো) ও আবগারি আইনে ওই চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আজ, শুক্রবার শাস্তি ঘোষণা করবেন বিচারক। সরকারি আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই মামলায় সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরে সাকিলার বিরুদ্ধে চোলাই মদে বিষ মিশিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু ওই ঘটনার কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বহু পরিবার তছনছ হয়ে গিয়েছে বিষমদ-কাণ্ডে। তাঁদেরই এক জন শচী বর। থাকেন উস্তিতে। বিষাক্ত চোলাই খেয়ে স্বামী নিরঞ্জনের মৃত্যুর পরে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে কোনও মতে আছেন। নিজে চোখে দেখতে পান না। সরকারি সাহায্যের ২ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে ডাকঘরে। তা থেকে মাসে মাসে ১৪০০ টাকা পেতেন আগে। কয়েক মাস ধরে পাচ্ছেন ১২০০ টাকা। তা দিয়েই সংসার খরচ, ওষুধপত্রের খরচ চলে। স্বামী দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। নিরঞ্জনের মৃত্যুর পরে শচী আর তাঁর অসুস্থ ছেলে মিঠুনের ওই ১২০০ টাকাটাই ভরসা। খোঁড়া বাদশাদের চরম শাস্তি চান শচী। বললেন, ‘‘আমার সব কেড়ে নিয়েছে ওরা। ওদের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy