Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বিদ্যুতের বাক্স ভেঙে নমুনা সংগ্রহে ফরেন্সিক 

দফায় দফায় বৃষ্টিতে ভবনের তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত অংশ বৃষ্টিতে ভিজে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেটিরিয়াল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সোমনাথ ঘোষের অভিমত।

ফিডার বক্স পরীক্ষা করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ।—ফাইল চিত্র।

ফিডার বক্স পরীক্ষা করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৫
Share: Save:

পাঁচ দিন পরে বাগড়ি মার্কেটের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর শঙ্কর সান্যাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ক্রমাগত জল দেওয়ার ফলে উত্তপ্ত মেঝে এখন অনেকটাই ঠান্ডা। আগুনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। আর কোথাও ধোঁয়া উঠছে না। ‘পকেট ফায়ার’-ও নেই।’’ তবে বাজারের একটি অংশ খুবই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ফরেন্সিক।

এ দিন দুপুরে রাজ্য ফরেন্সিক বিভাগের অধিকর্তা ওয়াসিম রাজার নেতৃত্বে বাগড়িতে যায় ফরেন্সিকের দল। ‘এ’ ব্লকের সামনে একটি ইলেক্ট্রিক্যাল বক্স ভেঙে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তারা, একটি দোকানের মিটার বক্স খুলে নেয়। রাজা বলেন, ‘‘ভিতরের কিছু কিছু জায়গায় তাপমাত্রা এখনও ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভিন্ন জায়গায় পেট্রোপণ্য পুড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল।’’ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানান, ‘এ’ ব্লকের দোতলা ও তেতলার অবস্থা খুবই বিপজ্জনক। ওই সব অংশের মেঝেতে পা দিলে মনে হচ্ছে, মেঝে কাঁপছে। কোথাও কোথাও আবার মেঝে এতটাই নরম হয়ে গিয়েছে যে, মনে হচ্ছিল, পুরোটাই না ভেঙে পড়ে! কংক্রিটের ভিতর থেকে লোহা ও স্টিলের রড বেঁকে নীচে নেমে এসেছে। কয়েকটা দেওয়াল হেলেও পড়েছে। বাজারের ভিতর থেকে সুগন্ধির বোতল, ওষুধের বোতল থেকে শুরু করে কিছু দাহ্য পদার্থের নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। স্মোক ডিটেক্টর দিয়ে দেখা গিয়েছে, কোথাও কোথাও এখনও ধোঁয়া আছে। থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা দিয়ে ভবনের বিভিন্ন তলার তাপমাত্রা পরীক্ষা করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।

দফায় দফায় বৃষ্টিতে ভবনের তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত অংশ বৃষ্টিতে ভিজে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেটিরিয়াল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সোমনাথ ঘোষের অভিমত। তিনি বলেন, ‘‘ফাটল দিয়ে বৃষ্টির জল ঢুকে কংক্রিটের ভিতরে স্টিল বা লোহার রডের ক্ষতি করবে। বাতাসের আর্দ্রতাও ফাটল দিয়ে ঢুকে কংক্রিটের ভিতরের ধাতব অংশের ক্ষতি করতে পারে।’’ কলকাতা পুলিশ পোড়া বাজারের মধ্যে কন্ট্রোল রুম খুলে ছ’টি গেট-সহ বিভিন্ন জায়গায় ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। কিছু ব্যবসায়ী পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীদের জিনিস বিক্রি করার জন্য বন্ধ শাটারে তাঁদের নাম ও ফোন নম্বর লিখে রেখেছেন।

এ দিন বাগড়ি মার্কেট থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু সংস্থার ওষুধ এবং প্রসাধন সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়। বাগড়ির একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ওষুধের দোকান। আগুনের তাপে সেই ওষুধের গুণমান খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করেই ড্রাগ কন্ট্রোল তার বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেই নিষেধাজ্ঞার পরেই বাইরে বিক্রি করার জন্য কিছু ওষুধ বাইরে আনা হচ্ছিল। লালবাজার জানিয়েছে, ওই ঘটনার পরেই বড়বাজার থানার অফিসারেরা পুড়ে যাওয়া বাগড়ি মার্কেটের ওষুধের দোকানগুলিতে হানা দেন। তাঁরা সেখানকার ৩০টি ওষুধের দোকান সিল করে দিয়েছেন। ডিসি (মধ্য) শুভঙ্কর সিনহা সরকার বলেন, ‘‘বাগড়ির ছ’টি গেটের মধ্যে দু’টি দিয়ে ব্যবসায়ীদের যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে। বাকি গেট বন্ধ করা হয়েছে।’’

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ দেখা যায়, দমকলকর্মীরা হাসিমুখে গ্রুপ ফোটো তুলছেন। পাঁচ দিন ধরে আগুন নেভানোর পরে সাফ্যলের উদ্‌যাপন কেন? এক দমকলকর্মী বলেন, ‘‘পাঁচ দিন লাগেনি। এক দিন আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পকেট ফায়ার ও মেঝে গরম থাকায় বিভিন্ন জায়গায় ধোঁয়া বেরোচ্ছিল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE