বাঁধ ভেঙে ঢুকছে অজয়ের জল। (ডান দিকে) ভিটেহারা হয়ে অজয় নদের বাঁধেই আশ্রয়। শুক্রবার নানুরের সুন্দরপুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
যেখানে ‘রেকর্ড’ বৃষ্টি হয়েছিল, সেই বাঁকুড়া এবং পশ্চিম বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে জল নামছে। তবে নতুন করে বাঁধ ভেঙে পরিস্থিতি বেহাল একাধিক জেলায়। হাওড়া, হুগলি এবং বীরভূমের কিছু কিছু এলাকার অবস্থা উদ্বেগজনক। প্রাণহানির কিছু ঘটনা ছাড়া, ক্ষয়ক্ষতির সামগ্রিক ছবি এখনও স্পষ্ট নয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বাঁকুড়া পুরোটা ডুবে গিয়েছে। পুরুলিয়ার অনেকটা, আসানসোলে অনেক জল জমেছিল। এখন অনেকটা কমেছে। পূর্ব বর্ধমানের অনেকটা ভাসছে। ওই জল আসছে হাওড়া এবং হুগলিতে। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামও প্রভাবিত হয়েছে। পুজো, নির্বাচন যা-ই থাক, মানুষের বিপদে পাশে থাকা আমাদের অগ্রাধিকার।’’
পশ্চিম বর্ধমানের ঘাগরবুড়ি লাগোয়া ২ নম্বর জাতীয় সড়কের জলভাসি অংশ থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই জল নেমে যায়। শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হয় যান চলাচল। সকাল পর্যন্ত আসানসোল পুরসভার চারটি ওয়ার্ডের কিছু অংশে জল জমে থাকলেও বিকেলে তা নেমে যায়। জেলায় ১১৬টি ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছে ১৩ হাজার বাসিন্দাকে। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস অরুণ প্রসাদ বলেন, “জলে ডুবে মৃত্যুর খবর নেই। তবে এক জন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে, দু’জন পাঁচিল চাপা পড়ে ও এক জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। এ ছাড়া, আর একটি মৃত্যুর খবর জানা যাচ্ছে, তবে তা কী কারণে, নিশ্চিত নয়।” রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘‘আসানসোলে এমন ঘটনা আগে কখনও হয়নি। জল নামতে অনেকটা সময় লেগেছে।”
বাঁকুড়া শহরের জলও নেমেছে। তবে দামোদর, শালি নদী ও বোদাই নদীর জলে বাঁকুড়ার বড়জোড়া, সোনামুখী ও পাত্রসায়র ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। বৃষ্টিতে ও জল ঢুকে বাঁকুড়ার ২২৯টি পঞ্চায়েতে ৫৯,৩১০ জন ক্ষতিগ্রস্ত। ৩,৯৪৮টি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে দু’জন, সাপের কামড়ে এক জন এবং জলে তলিয়ে এক জন মারা যান। ৬৫টি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন প্রায় আট হাজার মানুষ। ১৪,৭৯০ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। ১ লক্ষ ২৫ হাজার হেক্টর জমির ধান জলের তলায়। জেলাশাসক (বাঁকুড়া) কে রাধিকা আইয়ার বলেন, “ধাপে ধাপে জল নামছে।” পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ২, আউশগ্রাম ১, ২ ব্লকের বেশির ভাগ জায়গা থেকে জল নেমেছে। তবে ন’টি ব্লকের ৫৭টি গ্রামের কিছু অংশ জলমগ্ন।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টো নাগাদ বীরভূমের নানুরের সুন্দরপুর এবং নতুনডাঙাপাড়ার মাঝে অজয় নদের বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ ভেঙে যায়। এর ফলে, থুপসড়া পঞ্চায়েতের সুন্দরপুর, নতুন ডাঙাপাড়া-সহ বহু গ্রামে জল ঢোকে। তবে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় বাঁধ লাগোয়া সুন্দরপুরের। বাসাপাড়া বাজার থেকে কিলোমিটার ছয়েক রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় বোলপুর-পালিতপুর রুটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ দিন ঘুরপথে যেতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বাঁধভাঙা জল ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে ধানি জমি, রাস্তাঘাট।
হুগলির আরামবাগ মহকুমার ছ’টি ব্লকের ৬৩টি পঞ্চায়েতের প্রত্যেকটিই জলমগ্ন। সাতটি জায়গায় দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধ ভেঙেছে। জল জমে সড়কপথে বিচ্ছিন্ন আরামবাগ শহর। জেলা সেচ দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পাল জানান, দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী চরম বিপদসীমার চেয়ে ১.২ মিটার বেশি উচ্চতায় বইছে। প্রশাসন জানিয়েছে, তারকেশ্বর, ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়ায় গৃহবন্দি কয়েক হাজার। ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। দেওয়াল ভেঙে এবং তলিয়ে দু’জন মারা গিয়েছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহরের ১২টি ওয়ার্ডই এখন কম-বেশি জলের তলায়। ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনার বহু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এ দিন সকালে ঘাটালের গম্ভীরনগরে বাড়ির সামনের জমা জলে তলিয়ে মারা যায় এক বালক। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, ভগবানপুর, পাঁশকুড়ার বহু এলাকাতেও জল জমেছে।
প্রশাসনের দাবি, দামোদরের জল এ দিন বিকেলের মধ্যে ভাসিয়ে দেয় হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের ১০টি পঞ্চায়েতকে। ১৬ হাজার মানুষকে রাখা হয় ৯২টি ত্রাণ শিবিরে। উদ্ধারে নামানো হয় সেনা। আজ, শনিবার সে জলেই আমতা-২ ব্লকের ১৪টি পঞ্চায়েত প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা, ত্রাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান জেলাশাসক মুক্তা আর্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy