জল-যন্ত্রণা: ডুবে যাওয়া ঘর ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়ির পথে। বুধবার হাওড়ার জয়পুরে। ছবি: সুব্রত জানা।
ফের নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বানভাসি বঙ্গের অবস্থা জটিল হল। যে সব জায়গা থেকে জল নামতে শুরু করেছিল, সেখানে আকাশের মুখ দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রশাসনের কর্তারা। নতুন করে জল জমছে।
রূপনারায়ণকে বাদ দিলে হুগলির প্লাবিত আরামবাগ মহকুমার বাকি তিন নদনদীর (দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বর) সেই আগ্রাসী রূপ নেই। কিন্তু মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। রূপনারায়ণ এখনও ভরা। সেখানে জল নামছে না। আরামবাগ, পুরশুড়া এবং গোঘাট-১ ব্লক এলাকা থেকে ধীর গতিতে জল নামতে শুরু করলেও বুধবারের প্রবল বৃষ্টির পরে বর্ধমানের বিভিন্ন খাল থেকে জল গড়িয়ে আসা শুরু হয়েছে। ফলে, জমা জল বাড়ছে।
এ দিন সকালে খানাকুলের কাকনানের কালীতলায় রূপনারায়ণ থেকে বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, দেহটি স্রোতে ভেসে ওই জায়গায় আসে। তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
উদয়নারায়ণপুর ও আমতা-২ ব্লকের প্লাবিত এলাকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাওড়ায় দুর্গতের সংখ্যা ৩ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। এ দিনের বৃষ্টিতে ত্রাণের কাজে সমস্যা হয়। ভোগান্তিতে পড়েন খোলা জায়গায় আশ্রয় নেওয়া মানুষজন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমতা-২ ব্লকের সেহাগড়িতে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিস্থিতির জন্য তিনি ডিভিসি-কে দায়ী করেন।
দু’দিন ধরে ঘাটালের প্লাবন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল। জলস্তরও কমছিল। কিন্তু ফের নিম্নচাপের বৃষ্টি শুরু হওয়ায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বুধবার ঘাটাল পরিদর্শনে আসেন স্থানীয় সাংসদ দেব। বৃষ্টির মধ্যেই লাইফ জ্যাকেট পরে নৌকায় ওঠেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান একটি বহু চর্চিত বিষয়। কেন্দ্র সরকার ঘাটালের বন্যা মোকাবিলা নিয়ে কিছু করেনি। কোনও দিন ভাববেও না। একমাত্র দিদি প্রধানমন্ত্রী হলেই যে মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হবে, তা ঘাটালের মানুষ আগেই বুঝেছেন। রাজ্যের বাকি মানুষও বুঝতে পেরেছেন।’’
এ দিন মহকুমাশাসকের দফতরে প্রশাসনিক বৈঠকও করেন দেব। বৈঠক শেষে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ও জলে ডুবে মৃত দু’জনের পরিবারের হাতে দু’লক্ষ টাকা করে চেক তুলে দেন তিনি। প্লাবন পরিস্থিতির জন্য মৃত বাকিদের পরিবারকেও ওই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। ঘাটাল থেকে দেব যান কেশপুরে। দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করেন। এ দিন কেশপুর পরিদর্শনে আসেন সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও।
মঙ্গলবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টির জেরে সবংয়ের বিভিন্ন এলাকায় বাঁধে ফাটল দেখা যায়। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদীর বিভিন্ন অংশে ধসও নেমেছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আমি বিডিওকে একশো দিনের কাজে অবিলম্বে বাঁধ মেরামতের জন্য বলেছি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্লাবন পরিস্থিতির কারণে মঙ্গলবার পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সব মিলিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনই মারা গিয়েছেন জলে তলিয়ে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ঘাটালে। সেখানে এখনও ৪৬টি ত্রাণ শিবির চলছে। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, ত্রাণের কাজে গতি নেই। কিছু এলাকায় উদ্ধারকারী দলের দেখা মিলছে না বলেও অভিযোগ।
ঝাড়খণ্ডের সিকাটিয়া জলাধার থেকে জল ছাড়ায় সতর্ক করা হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের অজয় তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের। প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার দুপুর থেকে প্রায় ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়তে শুরু করেছে ওই জলাধার। এতে অজয় নদের জলস্তর বাড়বে। সেই কারণে আউশগ্রামের অমরপুর, রামনগর এবং ভেদিয়া পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ও রঘুনাথপুর-২ ব্লকের দামোদর ঘেঁষা ১৫-১৬টি মৌজার ধানজমি বুধবারও জলমগ্ন ছিল। মঙ্গলবার থেকে জলস্তর কমতে থাকলেও বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় আবার জল জমতে শুরু করেছে জমিতে। বৃষ্টি নেমেছে বাঁকুড়া জেলাতেও। বড়জোড়ার মানাচরের চাষের জমি থেকেও জল নামেনি। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, জল না নামায় চাষিদের এই মুহূর্তে কোনও অণুখাদ্য ও ছত্রাকনাশক দিতে বলা যাচ্ছে না। এতে ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
এখনও বিপদসীমার উপরে থাকলেও নদিয়ায় নামতে শুরু করেছে ভাগীরথীর জলস্তর। বুধবার সকালে তা সামান্য কমে দাঁড়ায় ৮.৬৮ মিটারে। চূর্ণী ও মাথাভাঙার জলস্তর এখনও বাড়ছে। তবে তা বিপদসীমার অনেকটাই নীচে রয়েছে। গত দু’দিনে শান্তিপুরের চৌধুরীপাড়া, নাকাশিপাড়ার কুলেপোতা এবং গ্রামীণ নবদ্বীপের ভাগীরথী সংলগ্ন কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল। সেই জল কিছুটা নেমেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy