সৃষ্টিশীল: ‘চিত্রাঙ্গদার গল্প’-এর প্রস্তুতি। বুধবার শান্তিনিকেতনে। নিজস্ব চিত্র
‘চিত্রাঙ্গদা’ নয়, এ বার ‘চিত্রাঙ্গদার গল্প’ দেখবেন শান্তিনিকেতন-সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মানুষ।
কলাভবনের শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে কলাভবন প্রাক্তনীদের পক্ষ থেকে ৯-১০ মার্চ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দু’দিনই দিনেন্দ্রকুঞ্জে (মালঞ্চ বাড়ির পাশে) সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা থেকে হবে অনুষ্ঠান। ‘স্মরণ’ এবং ‘চিত্রাঙ্গদার গল্প’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের মহড়া এবং প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে।
বুধবার কলাভবনের হ্যাভেল হলে গিয়ে দেখা গেল, প্রস্তুতির কাজে যাঁরা হাত লাগিয়েছেন, তাঁদের কেউ প্রায় ৪২ বছর আগে কলাভবনে পড়েছেন, কেউ আবার কয়েক বছর আগেই পাশ করেছেন। অনেকে বর্তমান পড়ুয়া। আবার এক সময় কলাভবনের ছাত্র ছিলেন, বর্তমানে কলাভবনেরই অধ্যাপক, এমন মানুষও আছেন। সমগ্র বিষয়টির নির্দেশক, অধ্যাপক, শিল্পী তথা রবীন্দ্র গবেষক শর্মিলা রায় পোমো বলেন, ‘‘নবীন-প্রবীণের মিলনে ‘চিত্রাঙ্গদার গল্প’ একটি পরীক্ষামূলক নির্মাণ পদ্ধতি। আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করছি। এক সময় আমি নিজেও কলাভবনের ছাত্রী হয়ে সঙ্গীতভবনে গান গেয়েছি। এই অনুষ্ঠানেও সঙ্গীতভবনের অনেকে আমাদের সহায়তা করছেন।’
১৯৩৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘চিত্রাঙ্গদা’ লিখেছিলেন। গল্পটা অনেকেরই জানা। রাজার ছেলে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়ে হল। মেয়ে হলেও চিত্রাঙ্গদা ছেলের মতো করেই মানুষ হলেন। এক সময় শিকারে গিয়ে স্বপ্নের নায়ক অর্জুনের সঙ্গে তাঁর দেখা হল। কিন্তু ছেলের মতো মানুষ হওয়া চিত্রাঙ্গদাকে দেখে অর্জুন ছেলেই ভাবলেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই আকৃষ্ট হলেন না। এর পরই চিত্রাঙ্গদার মধ্যে একটা নারীসত্ত্বা জেগে ওঠে। এ ভাবেই এগিয়ে যায় ‘চিত্রাঙ্গদা’।
এ বার ঠিক গল্পের মতো করেই পরিবেশিত হবে এই নৃত্যনাট্য। তাই নাম দেওয়া হয়েছে ‘চিত্রাঙ্গদার গল্প’। যেখানে মানুষ চরিত্রগুলির পাশাপাশি বাঘ, হাতি, পেঁচা, ময়ূর চরিত্রও মঞ্চে স্থান পেয়েছে। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ বিভিন্ন রঙে সেজে উঠবে চরিত্রগুলি। রবীন্দ্রনৃত্য ধারার সঙ্গেই লোকসংস্কৃতি যেমন রাইবেঁশে, থাংতা (মণিপুরের লোকনৃত্য), শাস্ত্রীয়নৃত্য কত্থক, ভরতনাট্যম, ওডিশির সংমিশ্রণে নৃত্যনাট্যের ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা। শর্মিলাদেবী জানান, বিভিন্ন রাজ্যের ছেলেমেয়েরা এখানে অভিনয় করছেন। তাই বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষার মেলবন্ধনও ঘটবে। বাঘ চরিত্রে অভিনয় করছেন শেখ গুল মহম্মদ। হিন্দিভাষী হওয়ায় হিন্দিতেই কথা বলবেন তিনি। এ ভাবেই সেজে উঠছে ‘চিত্রাঙ্গদার গল্প’। তাঁদের এই সৃষ্টিশীলতায় সাড়া দিয়ে কলকাতা থেকে এমন কয়েক জন শিল্পী এসেছেন, যাঁরা কলাভবনের প্রাক্তনী নন। শর্মিলাদেবী জানান, অনুষ্ঠান শুরুর প্রথমেই যে সমস্ত মাস্টারমশাই কলাভবন নির্মাণ ও পুষ্ট করেছেন, তাঁদের স্মরণ করা হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে অসিত হালদার, নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেইজ, কে জি সুব্রামনিয়ান-সহ অন্য প্রয়াত অধ্যাপকদের কাজের কথা বলে, তাঁদের লেখা পড়ে, তাঁদের সৃষ্টি দেখিয়ে স্মরণ করা হবে।
শর্মিলাদেবী জানান, দু’দিনের অনুষ্ঠানসূচি একই। প্রথম দিন অর্থাৎ শনিবার স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়া এবং এলাকার বয়স্ক মানুষদের জন্য বসার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি সমস্ত স্কুলের পড়ুয়াদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পর দিন অর্থাৎ রবিবার রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে লেখক, চিত্রশিল্পী, নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা আসবেন।
কলাভবনের শতবর্ষে সৃষ্টিকর্তাদের ‘স্মরণ’ এবং ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যের নতুন আঙ্গিক ‘চিত্রাঙ্গদার গল্প’ দেখতে প্রতীক্ষায় শান্তিনিকেতনের মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy