Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

কটূক্তির প্রতিবাদ, মার খেল ছাত্ররা

ইভটিজারদের অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছিল কয়েকজন ছাত্রী। ফরস্বরূপ স্কুল ঘিরে দিনভর পড়ুয়া ও শিক্ষকদের হুমকি দিল অভিযুক্তরা। এমনকী শিক্ষকদের সামনেই ছাত্রীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

স্কুলে পুলিশি পাহারা। কিংশুক গুপ্তর তোলা ছবি।

স্কুলে পুলিশি পাহারা। কিংশুক গুপ্তর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০১:২৪
Share: Save:

ইভটিজারদের অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছিল কয়েকজন ছাত্রী। ফরস্বরূপ স্কুল ঘিরে দিনভর পড়ুয়া ও শিক্ষকদের হুমকি দিল অভিযুক্তরা। এমনকী শিক্ষকদের সামনেই ছাত্রীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। স্কুল ছুটির পরে বাড়ি ফেরার পথে ইভটিজারদের হাতে বেধড়ক মার খেতে হল প্রতিবাদী ছাত্রীদের দুই সহপাঠী ছাত্রকে।

শুক্রবার এমন ঘটনারই সাক্ষী রইল ঝাড়গ্রাম শহরের ননীবালা বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। অরণ্যশহরে ইভটিজিংয়ের তেমন কোনও নিদর্শন নেই। কিন্তু শুক্রবারের এই ঘটনা টলিয়ে দিয়েছে সেই ভরসার জায়গাটুকুও। পরিস্থিতি এমন, যে ঘটনার পর শঙ্কিত স্কুল-কর্তৃপক্ষ পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছেন ।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই স্কুলের সামনে অযথা ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েকজন যুবক। অভিযোগের তির সৌম্যদীপ মজুমদার নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। সে একটি পুরনো খুনের মামলায় জামিনে রয়েছে। সেই সৌম্যদীপ আর তার দলবল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুল গেটের বাইরে দোকানের সামনে আড্ডা দেয় বলে অভিযোগ। ননীবালা স্কুলটির পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কেবলমাত্র ছেলেদের জন্য। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিটি সহশিক্ষামূলক। অভিযোগ, প্রায়ই আসা যাওয়ার পথে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের উত্যক্ত করত ওই যুবকরা। সন্ধ্যের পরে স্কুলের পাঁচিলের ধারে মদের আসর বসায় তারা। স্কুল প্রাঙ্গণের ভিতরে খালি বোতলও ছুড়ে দেয়।

স্কুল সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ টিফিনের সময় কয়েকজন ছাত্রী স্কুলের বাইরে খাবার কিনতে গিয়েছিল। অভিযোগ, তখন সৌম্যদীপের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক ওই ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দেয়। ছাত্রীরা কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে স্কুলে ফিরে গিয়ে শিক্ষকদের বিষয়টি জানায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমৃতকুমার নন্দী ঘটনাটি জানতে পেরে স্কুলের বাইরে এসে ওই মত্ত যুবকদের ধমক দিয়ে চলে যেতে বলেন। তখনকার মতো চলে গেলেও ফের কিছুক্ষণ পরে ওই যুবকরা আরও দলবল নিয়ে ফিরে আসে। তারপর স্কুলের বন্ধ দরজার বাইরে ধাক্কা দিয়ে ক্রমাগত পড়ুয়া ও শিক্ষকদের গালিগালাজ করতে থাকে তারা। স্কুল থেকে বেরোলেই প্রতিবাদী ছাত্রীদের ‘চরম শিক্ষা’ দেওয়ার হুমকি দেয় ওই যুবকরা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ ঝাড়গ্রামের উপপুরপ্রধান শিউলি সিংহকে বিষয়টি ফোন করে জানান। সঙ্গে সঙ্গে শিউলিদেবী স্কুলে চলে আসেন। শিউলিদেবীকে দেখে অভিযুক্তরা চম্পট দেয়। ইতিমধ্যে বিকাল চারটে নাগাদ স্কুল ছুটি হয়ে যায়। বাড়ি ফেরার পথে বাছুরডোবা ইয়ং ইলেভেনের কাছে একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রকে মারধর করে অভিযুক্তরা। এরপরই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমৃতকুমার নন্দী ঝাড়গ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সৌম্যদীপ ছাড়াও বাকি অভিযুক্তরা হল, দীপক বসু ওরফে বাপন, শুভঙ্কর সাউ ও বুম্বা দাস। অভিযুক্তদের মধ্যে অজ্ঞাত পরিচয় আরও কয়েকজন যুবক ছিল। সকলেই এলাকায় সমাজবিরোধী হিসেবে পরিচিত। পুলিশ মারধর ও গালিগালাজের ধারায় মামলা রুজু করেছে।

শনিবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, স্কুল চত্বরে পুলিশ রয়েছে। পুলিশের তদন্তকারী অফিসার এ দিন স্কুলে গিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। উপপুরপ্রধান শিউলি সিংহ বলেন, “খবর পেয়ে আমি স্কুলে গিয়েছিলাম। ছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চত করার জন্য পুলিশকে বলেছি। এ সব একেবারে বরদাস্ত করা যাবে না।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমৃতকুমার নন্দী বলেন, “অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন স্কুলের প্রাক্তন পড়ুয়া। ভাবতেই ভীষণ খারাপ লাগছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি।” স্কুলের প্রবীণ সহশিক্ষক ক্ষিতীশ মাহাতো, সুব্রতকুমার পাত্র-রা বলেন, “এত বছর শিক্ষকতা করছি। এভাবে কেউ কোনও দিন অপমান করার সাহস পায়নি।”

কিন্তু ঝাড়গ্রামের অন্য স্কুলগুলোর ছবিও কি তাই? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অরণ্যশহরের সরকারি গার্লস স্কুলটি-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্কুলগুলি রয়েছে বড় রাস্তার ধারে। সেখানে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের নজরদারি থাকে। কিন্তু ননীবালা বিদ্যালয়টির মতো শহরের কয়েকটি স্কুল মূল রাস্তা থেকে অনেকটাই ভিতরে। সেখানে মাঝে মধ্যে পুলিশের গাড়ি যায় বটে। তবে বাছুরডোবা এলাকার ননীবালা বিদ্যালয়ের চত্বরে পুলিশের নজরদারি তেমন নেই। অভিযোগ, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি সেখানে ঘাঁটি গেড়েছিল ওই সমাজবিরোধী যুবকরা।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে এমন দুষ্কর্ম করার সাহস কোথা থেকে পাচ্ছে? অভিযোগ উঠেছে, শাসক দলের এক পুর-কাউন্সিলের স্নেহধন্য ওই অভিযুক্তদের শনিবারও এলাকায় মোটরবাইকে চেপে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আমরা কড়া পদক্ষেপ নেব।”

অন্য বিষয়গুলি:

eve teaser protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE