উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের ডাফ স্কুলে রাজমিস্ত্রিদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠার পর অভিভাবকদের সব দাবিই মেনে নিলেন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। স্কুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মূলত চারটি দাবি করেছিলেন অভিভাবকেরা— সিসিটিভির সংখ্যা বৃদ্ধি, স্কুলে পরিচারিকার সংখ্যা বৃদ্ধি, শৌচাগারে পর্যাপ্ত আলোর বন্দোবস্ত এবং রাজমিস্ত্রিদের কাজ বন্ধ করা। সব দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে। স্কুলে আরও পরিচারিকা নিয়োগ করা হবে। শৌচাগারেও আলোর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। এ ছাড়া বলা হয়েছে, স্কুলের কিছু অংশে যে নির্মাণকাজ চলছিল, আপাতত তা বন্ধ রাখা হচ্ছে। এর পর কখনও নির্মাণকাজের প্রয়োজন হলে ছুটির দিনে তার ব্যবস্থা করা হবে।
স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে অধিকাংশ অভিভাবকই সন্তুষ্ট। তবে একাংশ এখনও বিক্ষুব্ধ। তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ নতুন করে জটিলতা তৈরি করেছে ডাফ স্কুলে। কয়েক জন অভিভাবক জানাচ্ছেন, ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে এখনও তাঁরা নিশ্চিত নন। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত আশ্বাস দাবি করেছেন তাঁরা। ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা বুবাই দাস। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিচ্ছেন বটে। কিন্তু কবে থেকে তা কার্যকর করা হবে, এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। সোমবার থেকে ওঁরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে বলছেন। কিন্তু নিরাপত্তা কোথায়? এর মধ্যে কিছু ঘটলে তার দায় কে নেবে? আমরা বাচ্চাদের পাঠানোর ক্ষেত্রে এখনও আশঙ্কিত।’’
আরও পড়ুন:
স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে অবশ্য সন্তুষ্ট হয়েছেন অধিকাংশ অভিভাবক। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবিকা প্রিয়াঙ্কা দাস, সুস্মিতা পালেরা বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আমরা সোমবার থেকে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাব। স্কুল কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ করবেন বলে জানিয়েছেন।’’
ডাফ স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা শ্রাবন্তী বিশ্বাস বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শনিবার স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক রয়েছে। অভিভাবকেরা তাঁদের বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন। স্কুলে ১৪টি সিসিটিভি আছে। তা-ও ম্যানেজিং কমিটি আলাদা করে তাঁদের দাবি মেনে নিয়েছে। সমস্ত দাবি নিয়ে শনিবারের বৈঠকে আলোচনা হবে। আমি চাই স্কুলের বাচ্চারা সোমবার থেকে ক্লাসে আসুক।’’
প্রাথমিকের ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ডাফ স্কুলের বাইরে। অভিভাবকেরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। অভিযোগ, স্কুলে বাইরে থেকে যে রাজমিস্ত্রিরা কাজ করতে এসেছেন, তাঁরা শিশুদের লজেন্স কিংবা চকোলেটের প্রলোভন দেখিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন এবং কুপ্রস্তাব দিচ্ছেন। ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে। একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। এমনকি, স্কুলের শৌচাগারের দরজায় গিয়েও মিস্ত্রিরা ধাক্কা দিচ্ছেন বলে দাবি করেছিলেন অভিভাবকেরা। তাঁরা জানান, এ বিষয়ে প্রধানশিক্ষিকার সঙ্গে তাঁরা কথা বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টিকে প্রথমে কর্তৃপক্ষ গুরুত্বই দেননি। প্রধানশিক্ষিকা জানিয়েছিলেন, বাচ্চারা মনগড়া কথা বলছে। টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বার করে দেওয়ার হুমকিও তিনি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। স্কুলের সামনে বিক্ষোভের মাঝে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কয়েক জনকে আটকও করা হয়েছিল। তার পরেই শুক্রবার অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিলের তিন জন প্রতিনিধিও শুক্রবার ডাফ স্কুলে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অভিভাবকেরা বৃহস্পতিবার শ্যামপুকুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। স্কুল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তারা সংগ্রহ করেছে।