বিচারপতির বাংলো থেকে হিসাব-বহির্ভূত টাকা উদ্ধারের ঘটনায় নিন্দার ঝড়। দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিও মেনে নিয়েছেন, এই ঘটনায় সকলে হতাশ এবং বিচলিত। টাকা উদ্ধারের কথা জানাজানি হওয়ার পর অভিযুক্ত বিচারপতি যশবন্ত বর্মার এজলাস বসেনি শুক্রবার। হাই কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, ওই বেঞ্চের বিচারপতি ছুটিতে আছেন। বিচারপতি বর্মাকে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম।
শুক্রবার দিল্লি হাই কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী অরুণ ভরদ্বাজ টাকা উদ্ধারকাণ্ডে প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায়ের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনা আমাদের অনেককে ব্যথিত করেছে। দয়া করে প্রশাসনিক দিক থেকে কোনও পদক্ষেপ করুন, যাতে এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর না-ঘটে এবং বিচারব্যবস্থার ভাবমূর্তি বজায় থাকে। আমরা বিচলিত এবং হতাশ।’’ প্রধান বিচারপতি উপাধ্যায় তাঁর কথায় সায় দেন এবং বলেন, ‘‘আমরা সকলেই বিচলিত এবং হতাশ।’’
আরও পড়ুন:
দিল্লিতে বিচারপতি বর্মার সরকারি বাংলো থেকে প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কোনও তদন্তকারী সংস্থা তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে এই টাকা উদ্ধার করেনি। গত সপ্তাহে দোলের ছুটি চলাকালীন তাঁর বাড়িতে হঠাৎ আগুন লেগে গিয়েছিল। পরিবারের সদস্যেরা দমকল ডাকেন। দমকলের কর্মীরাই ওই বাংলোতে টাকা দেখতে পান। আগুন নেভানোর সময়ে রাশি রাশি নগদ টাকায় তাঁদের চোখ পড়ে। ওই টাকার বান্ডিলগুলির ছবি এবং ভিডিয়ো তুলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠান দমকল কর্মীরা। সেখান থেকেই বিষয়টি জানাজানি হয়। বিচারপতি বর্মা সে সময়ে দিল্লিতে ছিলেন না।
অভিযোগ, বিচারপতির পরিবারের সদস্যদের টাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। হিসাব দেখাতে পারেননি বিচারপতি নিজেও। তার পর এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বে কলেজিয়াম বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আলোচনায় বসেছিল। তাঁরা বিচারপতি বর্মার বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ইলাহাবাদ হাই কোর্টে ছিলেন বিচারপতি বর্মা। ২০২১ সালে দিল্লি হাই কোর্টে চলে এসেছিলেন। সেখান থেকে আবার তাঁকে আগের আদালতের ফেরানো হচ্ছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জোরালো হয়েছে।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও হাই কোর্টের বিচারপতির কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের অভিযোগ থাকলে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আগে তাঁর কাছ থেকে জবাব চাইবেন। জবাবে তিনি সন্তুষ্ট না-হলে ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। এই কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের এক জন এবং যে কোনও দুই হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকবেন। তাঁদের রিপোর্ট দেখে দেশের প্রধান বিচারপতির যদি মনে হয় শাস্তি দেওয়া উচিত, তা হলে তিনি ওই বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলবেন। এর পরেও বিচারপতি যদি পদত্যাগে রাজি না-হন, তবে সংসদের মাধ্যমে তাঁর অপসারণের জন্য প্রধান বিচারপতি সরকারকে চিঠি লিখতে পারেন। ভারতীয় সংবিধানের ১২৪(৪) ধারা অনুযায়ী, সংসদের মাধ্যমে হাই কোর্টের বিচারপতিকে অপসারণ করা যায়।