— ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু তেমন কিছু গুরুতর অভিযোগের ধারা তাঁর বিরুদ্ধে দিতে পারেনি পুলিশ। কলেজে ঢুকে গোলমাল পাকানোর ঘটনায় তাই প্রত্যাশিত ভাবেই জামিন পেয়ে গেলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদার।
ডায়মন্ড হারবারের এসিজেএম আশিস গুপ্তের এজলাসে মঙ্গলবার মিনিটচারেকের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে জামিনের শুনানি। বিধায়কের বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি, ভাঙচুর, অনধিকার প্রবেশ-সহ কয়েকটি ধারা প্রয়োগ করেছিল পুলিশ, যার কোনওটাই জামিন-অযোগ্য নয়। জামিনের আবেদনের বিরোধিতা দূর অস্ত, কোনও কথাই বলেননি সরকারি আইনজীবী। আবেদনের শুনানির সময় আদালতের কাঠগড়াতেও ছিলেন না শাসক দলের বিধায়ক। বিচারকের নির্দেশ দেওয়ার পরে অবশ্য তিনি গিয়ে দাঁড়ান ঘেরাটোপের মধ্যে। দীপকবাবুর আইনজীবী সুদীপ চক্রবর্তী জানান, এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত জামিনে বিচারক তাঁর মক্কেলের জামিন মঞ্জুর করেন। সোমবার ফকিরচাঁদ কলেজে গোলমালের ঘটনায় দীপকবাবুর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ফারুক ঘরামি ও আনোয়ার হোসেন মীরের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল। জামিন পেয়ে গিয়েছেন তাঁরাও।
এর আগে অনুব্রত মণ্ডলের মতো শাসক দলের দাপুটে নেতা আত্মসমর্পণ করে পাঁচ মিনিটেই জামিন পেয়েছিলেন। বিধায়ত দীপকবাবু গ্রেফতার হয়ে একই দ্রুততায় জামিন পেয়ে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে স্বভাবতই সরব হয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যখন বিধায়ককে গ্রেফতার করতে হয়, তার মানে গুরুতর ঘটনা। তিনিই যদি চার মিনিটে জামিন পান, মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান থাকে কি?’’ সুজনবাবুর আরও দাবি, তৃণমূলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে দীপকবাবুর সংঘাত না বাধলে তাঁকে আদৌ গ্রেফতারই করা হতো না! কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়ারও বক্তব্য, ‘‘এই গ্রেফতারকে শিক্ষাঙ্গনে গুন্ডামি বন্ধের জন্য রাজধর্ম পালনের নিদর্শন বলা যায় না। ছাত্র পরিষদ বা এসএফআই যখন শাসক দলের সংগঠনের হাতে আক্রান্ত, সেই সময় প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিলে তবেই তাদের সদিচ্ছা বোঝা যাবে। ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ককে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকারের গায়ের কালির ছোপ মোছার চেষ্টা করেছেন মাত্র!’’
সরকারের তরফে বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, শাসক দলের বিধায়ককে পুলিশ হেফাজতে রাত কাটাতে হচ্ছে, এটাই যথেষ্ট ‘বিশাল পদক্ষেপ’। মেদিনীপুরে এ দিন পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানুষ অবাক হয়ে গিয়েছেন যে, এক জন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের দলের বিধায়ককে একটা গোলমালকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার করতে বলেছেন। আমাদের দল এটা পারে! সিপিএম আমলে আদালত নির্দেশ দিলে তখন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু কলেজে গোলমালে বামেদের কোনও বিধায়ক গ্রেফতার হয়েছেন, এই প্রশাসনিক পদক্ষেপ অতীতে দেখা যায়নি।’’ যদিও সুজনবাবুরা আবার পাল্টা দাবি করছেন, ‘‘সুব্রতবাবু ঘুরপথে ঠিকই বলেছেন! কলেজে বিধায়ক দাদাগিরি করে গ্রেফতার, এমন লজ্জা ৩৪ বছরে আসেনি!’’
বস্তুত, তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, ডায়মন্ড হারবারে বিধায়কের ‘দাদাগিরি’ দলেরই একটি বড় অংশের কাছে ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠছিল। এক কালে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং অধুনা এক তরুণ সাংসদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিধায়কের নানা কাজকর্ম নিয়ে নিয়মিত রিপোর্ট আসছিল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। কলেজে গোলমালে জড়িয়ে পড়তেই গ্রেফতার করে তাঁকে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কড়া বার্তা দিয়ে রাখা হল।
থানা এবং আদালত চত্বরে এ দিন দীপকবাবুও আরও জোর গলায় দাবি করেছেন, ‘চক্রান্ত’ করে দলের একাংশই তাঁকে গ্রেফতার করিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলেই কিছু লোক আছে, যারা আমাকে খারাপ প্রমাণ করে দল যাতে বিধানসভায় টিকিট না দেয়, সেই চেষ্টা করছে! দলীয় নেতৃত্বের কাছে আমার বিরুদ্ধে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাচ্ছে।’’ তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তের কথা তিনি কি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন? দীপকবাবু বলেন, ‘‘আগেও বিষয়টি ওঁকে জানিয়েছি। আবার জানাব। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করুন।’’ ডায়মন্ড হারবারেরই স্থানীয় নেতৃত্ব পান্নালাল হালদার, উমাপদ পুরকাইত, মনমোহিনী বিশ্বাস, দেবকী হালদারদের নাম করেছেন দীপকবাবু। যদিও তাঁরা সকলেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
দলের একাংশকে কাঠগড়ায় তুললেও দীপকবাবু অবশ্য মেনে নিয়েছেন, ‘‘সোমবার পুলিশের সামনেই ছাত্রদের মারধর করা হচ্ছে বলে খবর পাচ্ছিলাম। সেই খবরে উত্তেজিত হয়ে পুলিশের সঙ্গে যে আচরণ করেছি, তা আমার ভুল ছিল। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওই সময়ে আমি কলেজে না গেলে ছেলেগুলো তো মরেই যেত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy