এ ভাবেই মহীশূর ঘুরে এসেছেন রেখা কৃষ্ণাপ্পা ও তাঁর মতো আরও অনেকে। —নিজস্ব চিত্র।
রেখা কৃষ্ণাপ্পা বেঙ্গালুরুতে থাকেন। জিনঘটিত কারণে শৈশব থেকেই হাঁটতে পারেন না। হুইলচেয়ারই ২৩ বছরের তরুণীর জীবনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী। এমনকী একা একা নড়াচড়া করাটাও কষ্টের। সেই রেখাই বেড়িয়ে এলেন মহীশূর।
আর দশটা মানুষের মতোই বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল প্রশান্ত বর্মার। কিন্তু, ১৯ বছর বয়সে সংক্রমণে চলে গিয়েছে দৃষ্টি। স্ত্রী বীণাও অন্ধ। এমন দৃষ্টিহীন দম্পতিকে নিয়ে কে যাবে বেড়াতে? অথচ মাস দুয়েক আগে সস্ত্রীক ইউরোপ ঘুরে এসেছেন প্রশান্ত। ‘‘আমরা নতুন জায়গার মানুষ আর সেখানকার শিরশিরে হাওয়া ছুঁয়ে আনন্দ পাই,’’— বললেন বছর বিয়াল্লিশের প্রশান্ত।
রেখা-প্রশান্তের মতো মানুষগুলোর ইচ্ছা ও রেস্ত থাকলেও, যখন-তখন ছুটে চলে যেতে পারেন না। সামনে অনেক অন্তরায়। কেউ অন্ধ, কেউ হুইলচেয়ার ছাড়া একচুল নড়তে পারেন না, কেউ আবার বধির। মুম্বই ও দিল্লির এমন ৯০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে তাঁদের নানাবিধ অসুবিধার কথা। হুইলচেয়ার যাঁদের ভরসা, তাঁরা জানিয়েছেন, হোটেল রেস্তোরাঁয় র্যাম্প থাকে না। হোটেলের ঘরে সুইচ বোর্ড বা ইমার্জেন্সি বেল হাতের নাগালে থাকে না। শৌচালয় ছোট হলে হুইলচেয়ার নিয়ে ঘোরা যায় না। দৃষ্টিহীনেরা খাবারের মেনুকার্ড পড়তে পারেন না। বিভিন্ন দর্শনীয় মনুমেন্টে সিঁড়ির গায়ে হাতল না থাকায় উঠতেও পারেন না।
মুম্বই প্রবাসী বাঙালি দেবলীন সেন এঁদের কথা ভাবতে গিয়েই গত বছর মার্চে খুলে বসেন এক ট্র্যাভেল সংস্থা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় অন্য এক সর্বভারতীয় সংস্থা। দেবলীনের কথায়, ‘‘২০১১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী এ দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা আড়াই কোটিরও বেশি! গত সাত বছরে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। এঁদেরও তো ইচ্ছা করে বেড়াতে যেতে।’’ বছর পঁয়তাল্লিশের দেবলীন তাঁর স্বপ্ন সফল করতে যে ১২ জনের দল বানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৯ জনই প্রতিবন্ধী। দেবলীনের মতে, ‘‘ওঁরা সমস্যার কথা আরও ভাল ভাবে বুঝতে পারেন। তাই, আরও ভাল সমাধানও করতে পারেন।’’
ঘুরে ঘুরে এই প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘স্পট’ খুঁজে বেড়াচ্ছেন দেবলীন ও তাঁর দল। জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কেরল এবং গোয়া সব চেয়ে জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গ? দেবলীনের কথায়, ‘‘এখনও ঘুরে দেখিনি। তবে যাব। শুনেছি, দারুণ সব জায়গা আছে। ভুটান, ওডিশা, উত্তর-পূর্ব ভারতে এখনও স্পট বাছাই হয়নি।’’ নিজেদের প্রতি দিন সমৃদ্ধ করার কাজও চলছে। জানিয়েছেন, হোটেলে সুইমিং পুলে নামার জন্য এমন হুইল চেয়ারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে যা ভেসে থাকে।
কী বলছেন অন্য ‘ট্যুর অপারেটরেরা’?
একটি সংস্থার কর্তা শেখর সিংহরায় জানিয়েছেন, এই রকমের পর্যটকদের যে নির্দিষ্ট চাহিদা থাকে, তা পূরণ করার মতো পরিকাঠামো এখনও তাঁদের কাছে নেই। শেখরবাবুর কথায়, ‘‘আমরা যে বাস ব্যবহার করি, সেটি বেশ বড় এবং উঁচু। হুইলচেয়ার নিয়ে ওঠাই মুশকিল। বিদেশে লিফট লাগানো বাস আছে।’’ অন্য একটি ভ্রমণ সংস্থার ম্যানেজার আশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা হুইলচেয়ার সমেত পর্যটক সঙ্গে নিয়ে গেছি। কিন্তু, সে ক্ষেত্রে সেই পর্যটকদের সঙ্গে তাঁর অন্য আত্মীয় থাকেন। তাঁরাই হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে যান। এক অন্ধ ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে বেড়াতে যান। সঙ্গে স্ত্রীকে নিয়ে যান। একা গেলে আমাদের পক্ষে সামলানো মুশকিল।’’
শহরের একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্তা দিব্যজ্যোতি বসু বলেন, ‘‘আমরা কখনও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যাইনি। এই উদ্যোগটা দারুণ। ভবিষ্যতে আমরাও এরকম ভাবতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy