আরামবাগে আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দারের সঙ্গে। ছবি: মোহন দাস
গত লোকসভা ভোটে ভরাডুবির মধ্যেও কলকাতার কাছের যে কেন্দ্রে সিপিএম ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, সেটা আরামবাগ। সোমবার সেই আরামবাগেই নির্বাচনী প্রচারে এসে সিপিএমকে সন্ত্রাস নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, এ দিনই সিপিএমের বিরুদ্ধে দু’জনকে মারধরের অভিযোগ ওঠে আরামবাগে।
১৯৮০ সাল থেকে আরামবাগ লোকসভা আসনটি বরাবর সিপিএমের দখলেই রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে বহুবার সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে অবশ্য শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের পাল্টা অভিযোগ তুলতে শুরু করে সিপিএমই।
এ দিন তাঁর দলের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে মমতা বলেন, “অনেক বৈজ্ঞানিক রিগিং করেছেন। আরামবাগে সিপিএম যে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছিল, তা বিশ্বের মানুষ জানেন। আমার মুখ খোলাবেন না। এখানে এত দিন সিপিএম সন্ত্রাস করে জিতেছে। আমি সন্ত্রাস করতে দিই না। সন্ত্রাস বরদাস্ত করি না। কেউ বলতে পারবে না তৃণমূল এখানে সন্ত্রাস করছে।” এই বক্তব্য শোনার পরে সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, “আরামবাগের মানুষ জানেন, সন্ত্রাস কারা করছে।”
আরামবাগের দলীয় প্রার্থী আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দারের সমর্থনে এ দিন সভা করতে আসেন মমতা। বেলা আড়াইটে নাগাদ হেলিকপ্টারে তিনি এসে পৌঁছন স্থানীয় গড়বাড়ি মাঠে। পাশের পাতুল ময়দান ছিল তাঁর সভাস্থল। যথারীতি রাজ্যের করুণ আর্থিক অবস্থার জন্য সিপিএম এবং কংগ্রেস শাসিত কেন্দ্র সরকারকে দুষেছেন তিনি। অভাবের মধ্যেও তিনি কী ভাবে উন্নয়নের কাজ করছেন, তার ফিরিস্তিও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বলেই আমি এই পরিস্থিতে সরকার চালাচ্ছি। অন্য কেউ হলে পালাত। পশ্চিমবঙ্গ বেচে দিত।”
শ্রীরামপুরে সভার শেষে মঞ্চ ছাড়ছেন মমতা। ছবি: দীপঙ্কর দে।
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই আরামবাগে তাঁর দলে মাথাচাড়া দেয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এ নিয়ে গোলমালও কম হয়নি। এ বার লোকসভা ভোটের মুখে সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন, সে ব্যাপারে আগ্রহ ছিল দলের নেতা-কর্মীদের। বক্তব্যের একেবারে শেষে দলীয় প্রার্থী এবং কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না, দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত, পুরশুড়ার বিধায়ক পারভেজ রহমানের মতো কয়েক জন নেতাকে মঞ্চে এক সঙ্গে ডেকে নেন। নিজে সকলের মধ্যে দাঁড়িয়ে হাত তুলে ধরে অনেকটা শপথ নেওয়ানোর ভঙ্গিতে বলেন, “সকলে এক সঙ্গে উন্নয়নের কাজ করবেন। কোনও অশান্তি নয়। গোলমাল নয়।”
আরামবাগের পরে মমতার সভা হয় শ্রীরামপুরে। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। শ্রীরামপুর স্পোর্টিং মাঠের ওই সভায় মমতা এই গরমে নির্বাচন হওয়া নিয়ে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যথারীতি বিঁধেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে। দাবি করেছেন, তাঁর সরকারের মতো ‘স্বচ্ছ সরকার’ পৃথিবীতে আর একটিও কেউ দেখাতে পারবেন না।
নাম না করে শ্রীরামপুরের কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, “এখানে কংগ্রেসের একজন তথাকথিত নেতা রয়েছেন। ভোটে দাঁড়িয়েছেন। আগে নিজেদের নেতাদের সামলান। তার পরে আমাদের বিরুদ্ধে লড়তে আসবেন।” যা শুনে মান্নান বলেন, “দলের নেতারা ঠিকই আছেন। আমাকে অত ভয় পাওয়ার কী আছে? ওদের নিজেদের কেলেঙ্কারি আগে ওরা খুঁজে বের করুক।”
সহ-প্রতিবেদন: পীযূষ নন্দী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy