নজরুলের হাতে টাকা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: নির্মল বসু।
নিজেরা দৈনিক মজুরি পান মেরেকেটে ১৪০ টাকা। তা-ও সব দিন কাজ থাকে, এমনটা নয়। কিন্তু সেই টাকা থেকেই কিছু কিছু করে জমিয়ে তাঁরা তুলে দিয়েছেন অসুস্থ সহকর্মীর চিকিৎসার জন্য। বসিরহাট থানার সিভিক পুলিশ কর্মীদের এই কাজের তারিফ করছেন জেলা পুলিশ কর্তারাও।
বসিরহাটেরই উত্তর বাগুন্ডি গ্রামে নজরুল ইসলাম গাজি বেশ কয়েক বছর ধরে বুকে ব্যথা, সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। বিয়েও করেছেন। বছর তিনেকের মেয়ে সোহানি। অভাবের সংসারে গত বছর দুর্গাপুজোর আগে নজরুল যখন সিভিক পুলিশের কাজ পেলেন বসিরহাট থানায়, পরিবারটিতে কিছুটা স্বস্তি নেমে এসেছিল। কিন্তু রোদে-জলে কাজ করতে করতে পুরনো রোগ আরও চেপে বসতে লাগল।
ডাক্তারবাবু জানিয়ে দিলেন, হৃদযন্ত্রের অসুখটা দীর্ঘ দিননের অবহেলায় জটিল আকার নিয়েছে। কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বললেন, হৃদযন্ত্রের দু’টি ভাল্ভই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার না করতে পারলে জীবন সংশয় হতে পারে। কিন্তু অপারেশনের জন্য দরকার লাখ দেড়েক টাকা।
হিসেব শুনে নজরুল আর তাঁর বাবা ইসসার আলি গাজির মাথায় হাত। কোথা থেকে জোগাড় হবে এত টাকা? বাড়ি-সংলগ্ন সামান্য জমি বেচে কিছু টাকা আসে। কিন্তু সেটাও যৎসামান্য।
এ দিকে, দিনের পর দিন কাজে না আসায় নজরুলের সহকর্মীরা খোঁজ নিতে শুরু করেন। তাঁরা জানতে পারেন, নজরুলের অবস্থার কথা। রত্নদীপ শীল, বিশ্বজিৎ দাস, কামারুজ্জমান, রাজু দে, ফিরদৌস খাতুন, তমা রায়দের মতো সিভিক পুলিশ কর্মীরা ঠিক করেন, যতটুকু পারেন, সহকর্মীর পাশে দাঁড়াবেন। সেই মতো শুরু হয় চাঁদা তোলা। নিজেদের মজুরি থেকে টাকা দেন কিছু কিছু। শ’পাঁচেক সিভিক পুলিশ আছেন বসিরহাটে। সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় হয়ে যায়। সেটাই তখন অনেক টাকা নজরুলের পরিবারের কাছে। সিভিক পুলিশ কর্মীদের এই উদ্যোগে সাড়া পড়ে পুলিশ মহলেও। বসিরহাট থানার তরফে দেওয়া হয় আরও ১০ হাজার টাকা। পুলিশের তরফে আরও কিছু টাকা দেওয়ার আশ্বাসও মেলে।
দিন কয়েক আগে আইসি প্রসেনজিৎ দাসের থেকে টাকাটা হাতে পেয়ে অভিভূত নজরুলের চোখের কোণায় তখন জল টলমল করছে। বললেন, “অনেকে সঙ্গ দোষে জীবন নষ্ট করে ফেলে। কিন্তু আমার সৌভাগ্য, এমন বন্ধুদের পাশে পেয়েছি।” পুলিশের ভূমিকাও তিনি সারা জীবন মনে রাখবেন, বললেন যুবকটি। নজরুলের মা মোমেনা বিবি এবং স্ত্রী মারুফার চোখেও জল। বললেন, “আমরা গ্রামের মানুষ। ওঁদের ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা নেই। নজরুল আবার নতুন করে বাঁচতে পারবে।” নজরুলরা জানালেন, ভোট মিটলেই এ বার অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হবেন হাসপাতালে।
প্রসেনজিৎবাবু বলেন, সিভিক পুলিশরা যে ভূমিকা নিয়েছে, তা আমাদেরও গর্বিত করেছে। প্রয়োজন পড়লে আরও টাকার ব্যবস্থা আমরা করবো।” কী বলছেন নজরুলের সহৃদয় সহকর্মীরা? তাঁদের কথায়, “আমরা ঠিক করেছি যতটুকু সাধ্য আছে, আমাদের কেউ অসুবিধায় পড়লে, সেটুকু দিয়েই সাহায্য করবো।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy