উড়ালপুলের পিলার তৈরির কাজ চলছে। ছবি: তাপস ঘোষ।
চার বছর আগে হয়েছিল পরিকল্পনা। মাস দুয়েক ধরে চলছে নির্মাণকাজ।
জিটি রোড এবং দিল্লি রোডের সংযোগের জন্য উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে চন্দননগরে। চার বছর আগে যে পরিকল্পনা করেছিল বাম পরিচালিত পুরবোর্ড, সেই কাজই এ বার শুরু করেছে তৃণমূল বোর্ড। এর ফলে, লরি, ট্রাক বা বাসের মতো বড় গাড়ি এবং দমকল সহজে যাতায়াত করতে পারবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক উন্নয়নও হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এক প্রান্তে উত্তরপাড়া, অন্য প্রান্তে মগরা হুগলিতে জি টি রোডের এই ২৪ কিলোমিটারের সমান্তরালে রয়েছে দিল্লি রোড। মাঝখানে পড়ছে রেললাইন। বড় গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে দুই সড়কের সংযোগ রয়েছে মাত্র দু’টি এলাকায়। বৈদ্যবাটি এবং মগরায়। উত্তরপাড়া থেকে মগরা এই দূরত্বে ১৫টি রেল স্টেশনের মধ্যে বৈদ্যবাটি এবং মগরা ছাড়া অন্যগুলির ক্ষেত্রে দুই সড়কের মধ্যে বড় গাড়ি চলাচলের অন্তরায় স্টেশন সংলগ্ন সাবওয়ে। চন্দননগরে রেললাইনের উপর দিয়ে উড়ালপুল হলে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে মনে করছেন বড় গাড়ির চালক এবং ব্যবসায়ীরা।
কলুপুকুর-ভাগাড় ধার এবং নবগ্রাম আশ্রম মাঠের মধ্যে ৭৫০ মিটার লম্বা এবং ৫০ ফুট চওড়া ওই উড়ালপুলটি হচ্ছে কেএমডিএ এবং চন্দননগর পুরসভার যৌথ উদ্যোগে। দিল্লি রোডের দিকে তিন কিলোমিটার লম্বা অ্যাপ্রোচ রোডও হবে। প্রকল্পটির জন্য কেএমডিএ বরাদ্দ করেছে ৭০ কোটি টাকা। আগামী বছর মার্চ মাসের মধ্যেই কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। বর্তমানে ভাগাড় ধারে স্তম্ভ তৈরির কাজ চলছে।
চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, “দীর্ঘদিনের চেষ্টা বাস্তবে রূপায়িত হতে চলেছে। উড়ালপুলটি হলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নামী একটি ঠিকাদার সংস্থা ওই কাজের বরাত পেয়েছে। রেললাইনের উপর সেতুর উচ্চতা হবে প্রায় ৩০ ফুট। কাজ তদারকির জন্য মেয়রের নেতৃত্বে ঠিকাদার সংস্থা, কেএমডিএ, পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার, সার্ভেয়ার, কমিশনার-সহ মোট ২৫ জন সদস্যকে নিয়ে একটি ‘মনিটরিং টিম’ গঠন করা হয়েছে। কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রতি মাসে বৈঠকে বসছে কমিটি। স্তম্ভ তৈরি এবং অ্যাপ্রোচ রোড বানানোর জন্য ১৩ একর জমি লাগবে। ইতিমধ্যে ১২০টি পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ একর জমি কেনা হয়েছে। বাকি জমি পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন পুরসভার কর্তারা। একই বক্তব্য কেএমডিএ-রও।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই উড়ালপুলটি তৈরি শুরু হতে এত দেরি হল কেন?
২০১০ সালে যখন উড়ালপুলটি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তখন পুরসভার ক্ষমতায় ছিল বামেরা। পরে তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন কেএমডিএ-র কর্তারা। পুরসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা সিপিএমের গোপাল দাস বলেন, “পরিকল্পনার পরে আমরা সমীক্ষার কাজও করেছিলাম। সেই মতো কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরে পুরভোট চলে আসে। আমরা হেরে যাই। বর্তমান পুরবোর্ড দ্রুত কাজটা শেষ করলে মানুষ উপকৃত হবেন।”
ভাগাড় ধার এবং নবগ্রাম এলাকার বাসিন্দারাও মনে করছেন, ওই উড়ালপুল চালু হয়ে গেলে এলাকার আর্থিক উন্নয়ন হবে। উড়ালপুলের নীচে দোকানঘর করে তাঁরা ছোটখাটো ব্যবসা করতে পারবেন। প্রকল্পের জন্য ১৭ কাঠা জমি দিয়েছেন খলিসানি মৌজার মনসাতলার বাসিন্দা সাধন সাঁতরা। তিনি বলেন, ‘‘উড়ালপুলটি খুবই প্রয়োজন। কিছুদিন আগে এলাকায় আগুন লেগেছিল। দমকল সময়মতো পৌছতে পারেনি। এ বার সেই সমস্যা মিটবে।’’ অনন্তপুরের লক্ষ্মী মান্না নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, “উড়ালপুলের জন্য বেশি জমি দিতে হয়নি। তাই এক কথায় রাজি হয়ে যাই। প্রকল্পটি হলে দিল্লি রোডে যাতায়াত অনেক সহজ হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy