Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ঝুপড়ি ঘরে থেকে ডাক্তার হতে চায় বলাগড়ের সুদীপ

ঘরের দেওয়াল পাটকাঠির। তাতে বাহার আনার জন্য আঠা দিয়ে খবরের কাগজ সাঁটা। মাটির মেঝে। ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি এখনও। অন্ধকার নামলে কুপির আলোই ভরসা। এ হেন পরিবারে ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা।

এ ভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে এসেছে এই কিশোর। ছবি: প্রকাশ পাল।

এ ভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে এসেছে এই কিশোর। ছবি: প্রকাশ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বলাগড় শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

ঘরের দেওয়াল পাটকাঠির। তাতে বাহার আনার জন্য আঠা দিয়ে খবরের কাগজ সাঁটা। মাটির মেঝে। ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি এখনও। অন্ধকার নামলে কুপির আলোই ভরসা। এ হেন পরিবারে ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। হুগলির বলাগড়ের ভবানিপুর চর গ্রামের বর্মন দম্পতি এখন ভেবে পাচ্ছেন না, কি ভাবে ছেলের পরবর্তী পড়ার খরচ জোগাড় করবেন। মাধ্যমিকে পাহাড়প্রমাণ নম্বর পেয়ে বাবা-মায়ের মুখে যতটা হাসি ফুটিয়েছে ছেলে সুদীপ, তার থেকে ঢের বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

সুদীপ মিলনগড় জ্যোতিন্দ্রমোহন শিক্ষানিকেতন থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৫২। সর্বনিম্ন নম্বর বাংলায় ৯০। বাকিগুলির মধ্যে ইংরেজিতে ৯৫, অঙ্কে ৯২, ভৌত বিজ্ঞানে ৯২, জীবন বিজ্ঞানে ৯৬, ইতিহাসে ৯৩, ভুগোলে ৯৪। সুদীপের ইচ্ছে একাদশ শ্রেণিতে বলাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে। তার পরে জয়েন্ট এন্ট্রান্স, মেডিক্যাল কলেজ, গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানোর ছাড়পত্র— নিজের জন্য পরের পর ধাপ এখনই ঠিক করে রেখেছে গঙ্গার কোলঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেটি। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সেই ভাবনাচিন্তা যে বড় একটা মেলে না, সেটাও সে বিলক্ষণ জানে।

জানেন বাবা সুধীরবাবুও। কতই বা রোজগার তাঁর! আগে ভ্যান চালাতেন। মিলনগড় ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতেন। তাতেই কোনও রকমে সংসার চলত। বছর দেড়েক আগে যাত্রী পরিবহণে অটোরিক্সার মতো এক ধরণের গাড়ি আমদানি হওয়ায় ভ্যানের যাত্রীসংখ্যা কমে গেল। সেই থেকেই ভ্যান চালানো ছেড়ে খেতমজুরি করছেন। স্ত্রী শুক্লাদেবী বিড়ি বাঁধেন। দু’জনের মিলিত আয়েও অবশ্য নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।

তবে ভাঙা ঘরে থেকে, নুন-ভাত খেয়েও কোনও অনুযোগ নেই মুখচোরা সুদীপের। ছোট থেকেই বই-খাতা তার মূলমন্ত্র। বরাবর ক্লাসে প্রথম হয়েছে সে। মাধ্যমিকেও তার অন্যথা হয়নি। সে জানায়, তার পড়াশোনার পিছনে কয়েক জন শিক্ষক শিক্ষিকার অবদান রয়েছে যথেষ্ট। বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার আগে মাস্টারমশাই-দিদিমনিরা একটি ব্যাটারিচালিত ইমারজেন্সি আলো কিনে দিয়েছেন সুদীপকে। তার কথায়, “কুপির আলোতে বইয়ের লেখা ভাল করে দেখা যায় না। এই আলোটা অনেকটা সাহায্য করেছে। বাড়িতে কারেন্ট না এলে ভবিষ্যতেও এটা দিয়ে চালিয়ে নিতে পারব।” মাধ্যমিকের পর থেকেই একাদশ শ্রেণির পড়া শুরু করে দিয়েছে সে। যদিও সব বই এখনও কিনে দিতে পারেননি বাবা-মা। কবে পারবেন, সেই প্রশ্নেও উত্তর সরে না তাঁদের। ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকেন কেবল।

ভবিষ্যতে কি হবে সেটা সময় বলবে। গ্রাম্য বধূ শুক্লাদেবী জানেন, গ্রামে পাশ করা ডাক্তার নেই। আপদে বিপদে হাতুড়েই ভরসা। ছেলে গ্রামবাসীদের সেই অভাবটা পূরণ করবে, মনে সাধ জাগে তার। শুধু নিজেদের সাধ্যের কথা ভাবলে চোখদু’টো ঝাপসা হয়ে আসে!

অন্য বিষয়গুলি:

balagarh sudip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE