রিল্যাকসন কারখানা পুনরুজ্জীবনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ’দুয়েক শ্রমিকের বকেয়া আত্মসাত করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ অভিযোগ শ্রমিক-কর্মীদের। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনৈতিক ভাবে কারখানার জমি বিক্রির অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা।
হুগলির কোন্নগরে জি টি রোডের পাশে প্রায় ৩০ একর জমিতে বাঙ্গুর গোষ্ঠীর দু’টি কারখানা ছিল শ্রীরাম স্লিকস ও রিল্যাকসন। কয়েক দশক আগেই শ্রীরাম স্লিকস বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ১২ একর জমির উপরে গদি তৈরির কারখানা রিল্যাকসন রমরমিয়ে চলতে থাকে। এক সময় সেখানে প্রায় সাড়ে চারশো শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু কালক্রমে ওই কারখানাটিতেও মন্দা দেখা দেয়। পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে কর্মিসংখ্যা। ১৯৯৫ সালে কারখানাটিকে ‘রুগ্ণ’ ঘোষণা করা হয়।
কারখানাটির পুনরুজ্জীবনের জন্য কর্তৃপক্ষ বাম সরকারের কাছে বাড়তি জমি বিক্রির অনুমতি চেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে তৎকালীন সরকার কারখানার বাড়তি জমি বিক্রির অনুমতি দেয়। সেই সময়েই কারখানায় স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা দু’শোয় নেমে আসে। বিলের টাকা বকেয়া থাকায় ইতিমধ্যে কারখানার বিদ্যুৎ এবং জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। কারখানার এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, “কর্তৃপক্ষ এখনও কারখানা চালাতে আগ্রহী। কিন্তু কার্যকরী মূলধন না থাকায় চালাতে পারছেন না।”
শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েক কোটি টাকায় একটি সংস্থাকে কারখানার জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। কারখানা পুনরুজ্জীবনের শর্তেই তৎকালীন বাম সরকার জমি বিক্রির অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু পুনরুজ্জীবন হয়নি। উল্টে ২০১০ থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ থেকে কোনও শ্রমিকই বকেয়া পাচ্ছেন না। যদিও তাঁরা প্রতি দিনই নিয়ম করে কারখানায় আসছেন। হাজিরা খাতায় সই করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। জেলা শ্রম দফতরে বারবার বকেয়া বেতন, পিএফ, গ্র্যাচুইটি, ইএসআইয়ের জন্য দরবারও করেছেন শ্রমিকেরা। সংশ্লিষ্ট দফতর বকেয়া টাকা মেটানোর জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।
শ্রমিকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, তাঁদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এ দিকে, কারখানার বাড়তি জমি বিক্রি করে প্রোমোটারকে দিয়ে আবাসন তৈরির ছক কষা হচ্ছে। কারখানার এক পদস্থ কর্তা অবশ্য দাবি করেন, “এটা ঘটনা যে শ্রমিকেরা বকেয়া পাচ্ছেন না। কিন্তু ওঁরা ভুল বুঝছেন। জমিটি আদৌ বিক্রি করা হয়নি। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে শ্রমিক, মালিক, সরকার পক্ষ সকলের অনুমতি নিয়ে ৯৯ বছরের লিজে একটি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। ”
রিল্যাকসন কাখানার পুরনো শ্রমিক নিমাই মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “এই কারখানায় উৎপাদন বন্ধ, অথচ বাজারে দেখছি রিল্যাকসনের গদি বিক্রি হচ্ছে। এটা কী করে সম্ভব? এর পিছনে নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের জালিয়াতি আছে। ২০০৭ সাল থেকে আমাদের বকেয়া টাকা দেওয়া হয়নি। আমি নিজেই প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা পাব। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করার কথা ভাবছি।” শ্রমিক উপেন্দ্রনাথ মহান্তি, ইন্দ্রজিৎ হালদার, হিমাংশু তালুকদারেরাও একই কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, “কারখানার জমিতে আমরা অন্য কোনও কিছু হতে দেব না।”
ইতিমধ্যে জেলারই একটি আইনি সহায়তা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন শ্রমিকেরা। সেটির কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওঁদের যা অবস্থা তাতে হাইকোর্টে যাওয়া ছাড়া পথ নেই। কর্তৃপক্ষের অমানবিক আচরণে বকেয়া না পেয়ে বহু শ্রমিক ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন, মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন আরও অনেকে।” কারখানার এক পদস্থ কর্তা বলেন, “যে জমিটি লিজে হস্তান্তর করা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সেটির মিউটেশন না হওয়ায় যে সংস্থা জমিটি নিয়েছে তারা তা ব্যবহার করতে পারছেন না। রাজ্য সরকার দ্রুত জমিটির মিউটেশন করে দিলে জট অনেকটাই কাটবে বলে আমাদের আশা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy