বন্ধের দ্বিতীয় দিনেও সরকারি দফতরে হাজিরার ছবিটা বিশেষ পাল্টায়নি। কিন্তু চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে মঙ্গলবার যে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বিমল গুরুঙ্গের দল, দার্জিলিঙে তা সর্বাত্মক।
ঘরে-বাইরে সাঁড়াশি চাপের মুখে থাকা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কাছে এই ঘটনা যথেষ্ট স্বস্তির। তাদের আরও খানিকটা স্বস্তি দিয়ে এ দিনই সর্বদলীয় বৈঠকে ২০ তারিখ পর্যন্ত সরকারি অফিসে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৈঠকে হাজির ছিল তৃণমূলের সহযোগী দল জিএনএলএফ। মোর্চা নেতা রোশন গিরির দাবি, ‘‘সবাই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে একযোগে লড়তে রাজি হয়েছেন।’’ তবে আন্দোলন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মোর্চা নেতৃত্বের সামনে কিছু শর্ত রেখেছে দলগুলি। ‘‘এটা নিয়ে আমরা ভাবব,’’ বলেছেন রোশন।
তৃণমূল অবশ্য মোর্চার ‘সর্বদলীয় ঐক্যের’ দাবিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলীয় নেতা বিন্নি শর্মার বক্তব্য, পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে বুঝেই সর্বদল বৈঠকের নাটক করছে মোর্চা। কিন্তু জিএনএলএফ কেন ওই বৈঠকে গেল? ঘিসিঙ্গের দলের প্রতিনিধি নীরজ জিম্বা বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু দু’দলের আদর্শের জায়গাটা আলাদা।’’ আর তৃণমূলের বক্তব্য, ওদের পৃথক অবস্থান থাকতেই পারে।
সর্বদল বৈঠক আপাত স্বস্তি দিলেও শেষ পর্যন্ত তাতে মোর্চার মুখরক্ষা হবে কিনা, তা নিয়ে কিন্তু সংশয়ে পাহাড়ের রাজনীতিকরা। কারণ, প্রথমত বিমল গুরুঙ্গ নিজে বৈঠকে আসেননি। যা নিয়ে বিস্তর গুঞ্জন। আসেনি কালিম্পঙের গুরুত্বপূর্ণ দল হরকাবাহাদুরের জাপ-ও। তা ছাড়া, বৈঠকে উপস্থিত দলগুলি মোর্চাকে এমন সব শর্ত দিয়েছে, যা মানা তাদের পক্ষে কঠিন।
আরও পড়ুন:ঝুঁকি নয়, তাই আর বুকিং নয় পাহাড়ের হোটেলে
কী সেই শর্ত? প্রথমত, জিটিএ প্রধানের পদ থেকে গুরুঙ্গকে ইস্তফা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরতে হবে সব জিটিএ সদস্যকেও। তৃতীয়ত, ইস্তফা দিতে হবে মোর্চার তিন বিধায়ককে। চতুর্থত, পাহাড়ের পুরসভাগুলি থেকে ইস্তফা দিতে হবে মোর্চার সব চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরকে। এমনকী, ভবিষ্যতে মোর্চা পাহাড়ে নতুন কোনও স্বশাসিত প্রশাসনে অংশ নিতে পারবে না বলেও লিখিত প্রতিশ্রুতি চেয়েছে জিএনএলএফ।
এই সব শর্তই ভাঁজ ফেলেছে মোর্চা নেতাদের কপালে। সবে গত বছর জিতেছেন তিন বিধায়ক। আর কাউন্সিলরেরা তো ক’সপ্তাহ আগে। অন্য দিকে, জিটিএ-র মেয়াদ আর এক মাস। তার পরে ভোট। তাতে যোগ না দিলে মূল রাজনৈতিক স্রোত থেকে সরে থাকতে হবে।
মোর্চা নেতাদের চিন্তা আরও বাড়িয়ে ক্রমেই কড়া হচ্ছে সরকার। রাস্তাঘাট, সরকারি অফিসের আশপাশে বেচাল দেখলেই ফুঁসে উঠছে পুলিশ। এ দিনও চকবাজারে লাঠিপেটা করা হয়েছে মোর্চার বিক্ষোভকারীদের। রাতে পাহাড়ে উঠছে আরও ছ’কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী। ঘরের মধ্যে আন্দোলনে তীব্রতা আনার চাপ ও বাইরে তা প্রত্যাহার না করলে আরও কঠোর আইনি পদক্ষেপের ইঙ্গিত। নিয়ম করে পাহাড়ের পরিস্থিতির খবর রাখছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি রয়েছে পাহাড়ের ব্যবসায়ীদের চাপ।
এই প্যাঁচের মধ্যে দিল্লির কাছ থেকে বার্তা চাইছে মোর্চা। রোশন এ দিনও বলেছেন, ২০ তারিখের মধ্যে দিল্লি কোনও বার্তা পাঠালে তাঁরা নতুন করে ভাববেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy