ঝড়ে সব লন্ডভন্ড। ছবি: পিটিআই।
জল-কাদা ভেঙে নদীর ঘাট থেকে কিছুটা হেঁটে, কিছুটা ছুটে যেখানে এসে দাঁড়ালেন শ্যামলী প্রামাণিক, দিন তিনেক আগেও সেখানেই ছিল তাঁদের মাটির বাড়িটা।
এখন রয়েছে খানতিনেক ভাঙা দেওয়াল— আমপানের ধ্বংসচিহ্ন।
উঠোনে চেনা মানুষের আওয়াজ পেয়ে ছুটে এল কালো রঙের গাইগরুটি। ভিজে শরীর ঘষতে লাগল মালকিনের গায়ে। ডুকরে কেঁদে শ্যামলী জড়িয়ে ধরলেন
তাকে। তত ক্ষণে উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছে শ্যামলীর স্বামী ও বছর চারেকের ছেলে।
আমপানের দু’দিন পরে শুক্রবার ত্রাণ শিবির থেকে বাড়ি ফিরলেন ঘোড়ামারার সাড়ে ছ’শো বাসিন্দা। প্রাণ বাঁচাতে শিবিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু গবাদি পশু, জমি-জিরেত সবই পড়ে ছিল ওই ছোট্ট দ্বীপটাতে। এ দিন ফিরে বেশির ভাগই ঘর ফিরে পাননি। খোঁজ নেই গবাদি পশু, হাঁস-মুরগিরও। আমপানের ছোবলে দ্বীপ লাগোয়া নদী-বাঁধ কোথাও ভেঙেছে, কোথাও ক্ষয়ে গিয়েছে।
প্রাণহানি বাড়তে পারে ভেবেই নদী লাগোয়া এলাকার সাড়ে ছ’শো বাসিন্দাকে সাগরদ্বীপের শিবিরে সরিয়ে আনা হয়। শুক্রবার সকালে ঝলমলে রোদ দেখেই তাঁরা প্রশাসনের কাছে বাড়ি ফেরার দাবি জানাতে থাকেন। কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে দু’টি ভেসেলে করে তাঁদের ঘোড়ামারায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, প্রায় সব কাঁচা বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত। ঝড়-বৃষ্টি এবং খাবারের অভাবে অনেক গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের
পক্ষ থেকে ত্রিপল বিলি করা হয়। আপাতত ভাঙা বাড়ির উপরে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে বাসযোগ্য করা হচ্ছে। যাঁদের পুরো বাড়ি মাটিতে মিশেছে, ত্রিপলের ছাউনিই আপাতত তাঁদের ভরসা।
আরও পড়ুন: দোতলা সমান ঢেউ! বাঘের সঙ্গে ঘর করা মৈপিঠের গ্রামবাসীরা লড়ছেন বাঁধের সঙ্গে
ঘরে ফেরা সুমিত্রা দাস, মহাদেব পাত্ররা অবশ্য এমন ঘটনায় অভ্যস্ত। ঝড়ের সতর্কতা জারি হলেই তাঁদের ঠাঁই হয় সাগরের ত্রাণ শিবিরে।
বাড়ি ফিরে এমন দৃশ্য যে দেখতে হবে, তা জানতেন তাঁরা। আয়লা ঝড়ে তাঁরা এই দ্বীপেই ছিলেন। দেখেছেন তার ভয়াবহতা। কিন্তু ত্রাণ শিবির থেকে আমপানের যে রূপ দেখেছেন তাঁরা তাতে এখনও আতঙ্কিত তাঁরা। ফলে ঘর বাড়ি যে আর ফিরে পাবেন না, তা জানতেনই। অনেকেই গবাদি পশু-হাঁস-মুরগিরও খোঁজ পাননি। সকলেই বলছেন, ‘‘আরও এক বার নতুন করে শুরু করতে হবে। ঘরে মজুত করে রাখা চাল-ডালটুকুও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ দিন ত্রিপলের সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হয়েছে শুকনো খাবারও।
স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ প্রামাণিক জানান, দ্বীপে প্রায় দেড় হাজার পানের বরজ ভেঙে মাটিতে মিশে গিয়েছে। পাকা ধান জলের তলায়। বটতলা এলাকায় নদীর বাঁধে ৫০০ মিটার জুড়ে ধস নেমেছে। রবিবার অমাবস্যার কোটালের জোয়ারে বাঁধ ভেঙে নোনা জল প্লাবিত হতে পারে পুরো এলাকা। ফলে মাথা গোঁজার স্থানের সঙ্গে ধেয়ে আসছে অর্থনৈতিক সঙ্কটও। ধান-পান আর চিংড়ির মিনই এখানকার জীবনরেখা। কার্যত মুছে গিয়েছে সেই সম্বলও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy