ঘটা করে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমটি (সিএসটিসি) কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় নতুন ৬৩২টি বাস কিনেছে। বর্তমানে তাদের বাসের সংখ্যায় হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশির ভাগ দিনই একটি শিফ্টে সাতশো বাসও নামাতে পারছে না ওই নিগম। কারণ, সংস্থার চালক-কন্ডাক্টরের গড় বয়স পৌঁছেছে ৫৮-এ। এঁদের বেশির ভাগেরই আর পেল্লাই সাইজের বাস চালানোর ক্ষমতা নেই। অবসরের কাছাকাছি চলে আসায় অনেকেই দিনের পর দিন ছুটি নিয়ে বসে থাকছেন। অগত্যা চুক্তির ভিত্তিতে আরও দুশো অস্থায়ী চালক-কন্ডাক্টর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল সিএসটিসি।
নিগম সূত্রের খবর, সংস্থার মোট ৪৪০০ কর্মীর মধ্যে প্রায় ১২০০ জন চালক, ১৩০০ কন্ডাক্টর। এর একটা বড় অংশই কাজে আসছেন না। গরমে এই গরহাজিরার মাত্রাও ক্রমশ বাড়ছে। নিগমের এক কর্তার কথায়, ‘‘অনুপস্থিত কর্মীদের বেশির ভাগেরই বয়স ৫৫-র বেশি। তাঁদের পক্ষে আর কায়িক পরিশ্রম করে গাড়ি চালানো কিংবা যাত্রীদের ভাড়া নেওয়ার কাজ কার্যত করা সম্ভব নয়। তাই, ওঁরা এলেও যে নিগমের যে বিরাট উপকার হবে, এমনটা নয়।’’
নিগমের কর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন বাসগুলো চালাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী দরকার। পুরনো, বয়স্ক কর্মীদের ওই প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন বাসের দায়িত্ব তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের অনেকেই কায়িক পরিশ্রম করতে আগ্রহীও নন। এই অবস্থায় মাস চারেক আগে নিগম-কতৃর্পক্ষ চুক্তিবদ্ধ ২০০ চালক ও ৫০ কন্ডাক্টর নিয়োগ করেন। মাস দুই আগে আরও অকপ্রস্থ চালক-কন্ডাক্টর নেওয়া হয়।
নিগমের সিটু সমর্থিত কর্মসমিতির অবশ্য অভিযোগ, নিয়োগপত্র পেয়েও বেশ কিছু চুক্তিবদ্ধ কর্মী কাজে যোগ দেননি। কাজে যোগ দেওয়া কিছু কর্মী ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। কর্মসমিতির সাধারণ সম্পাদক রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ওঁদের অনেকে ভেবেছিলেন এটা সরকারি চাকরির মত লোভনীয়। কিন্তু কাজে যোগ দিয়ে দেখছেন মাসে সাড়ে আট হাজার টাকা ছাড়া কিছু পাবেন না। পিএফ, গ্র্যাচুইটি নেই, ছুটি ও কাজে স্থায়ীকরণের সম্ভাবনাও যৎসামান্য— অনেকে এ সব কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’’
এই অবস্থায় আরও একশো চালক এবং একশো কন্ডাক্টর চুক্তির ভিত্তিতে নিতে চাইছে নিগম। সিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভীষ্মদেব দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘চালক-কন্ডাক্টরদের ১০-১৫ শতাংশ গড়হাজির থাকলেও অবস্থার সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু এই শতাংশ ৩০ হয়ে গেলে তো সমস্যা হবেই! দ্রুত আরও চালক-কন্ডাক্টর নিয়োগ করে অবস্থা সামাল দিতে চাইছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো কাজের শর্ত আগাম জানিয়েই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। অন্যত্র বাড়তি বেতনের কাজ পেয়ে কেউ কেউ হয়ত অন্যত্র চলে যাচ্ছেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy