এক নিগম পেরেছে, অন্য নিগম পারেনি। যার জেরে এক নিগমের ভলভো বাস ৬ থেকে ৭ বছর পরেও তরতাজা। আর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে অন্য নিগমের বেশ কয়েকটি বাস।
নিগম এক, পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিএসটিসি)। অন্যটি কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি)।
পরিবহণ দফতরের হিসেব বলছে, ২০০৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে যখন ১৫ বছরের পুরনো বাস রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে, সে সময়ে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ডব্লিউবিএসটিসি কিনেছিল ৪২টি ভলভো বাস। এখনও সবক’টি বাসই ঝাঁ-চকচকে।
অন্য দিকে, মাত্র দেড় বছর আগে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পেই
৬৩টি ইউরো-৪ বাস কিনেছিল সিএসটিসি। কিন্তু এর মধ্যেই তার অধিকাংশ খোঁড়াচ্ছে।
কেন এই অবস্থা? পরিকল্পনামাফিক রক্ষণাবেক্ষণই দুই নিগমের মধ্যে ফারাক তৈরি করে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন রাজ্য পরিবহণ কর্তারা।
কী সেই ফারাক? ভূতল পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, প্রতি দিন বাসের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এবং তা করা হয় রাতের শিফ্টে। ভূতল পরিবহণ নিগমের এক কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের নিয়ম হচ্ছে, প্রতি বাসের একটি জব কার্ড রয়েছে। প্রতিটি বাসের চালক ডিউটি শেষ করে রাতে বাস গ্যারাজ করার সময়ে জব কার্ডে লিখে রেখে যান, সংশ্লিষ্ট বাসে কী কী সমস্যা রয়েছে।’’ ডব্লিউবিএসটিসি-তে দু’জন প্রশিক্ষিত ভলভো বাসের ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিগমের আরও চার-পাঁচ জন কর্মী বাস মেরামতির প্রক্রিয়া শিখে নিয়েছেন। এঁদের নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি রক্ষণাবেক্ষণের দল। জব কার্ডে চালকের লিখে রেখে যাওয়া সমস্যা মিলিয়ে মিলিয়ে ওই দলটিই বাসের রক্ষণাবেক্ষণ করে।
তা ছাড়াও নিয়মিত দেখা হয়, বাসের টায়ার, এসি মেশিন, ফ্যান বেল্ট, রেডিয়েটর, ওয়াইপার, বাসের পরিচ্ছন্নতা, ব্যাটারি কী অবস্থায় আছে, সেই সবও।
এখানেই শেষ নয়, পরের দিন কোনও অবস্থায় বাস মাঝ রাস্তায় খারাপ হলে আগের দিনের জব কার্ড মিলিয়ে দেখা হয় এবং সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারের কাছে জবাবদিহিও চাওয়া হয়। পরিবহণ কর্তাদের দাবি, গত ৬-৭ বছর ধরে এই নিয়মেই ঝাঁ-চকচকে রয়েছে ডব্লিউবিএসটিসি-র ৪২টি বাস।
আর ঠিক এই রক্ষণাবেক্ষণের প্রক্রিয়ায় খামতি থাকার কারণেই ক্রমশ পঙ্গু হয়ে পড়ছে সিএসটিসি-তে মাত্র দেড় বছর আগে কেনা ৬৩টি ভলভো বাস।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সিএসটিসি-তে রাতের শিফ্টে বাসের রক্ষণাবেক্ষণের কোনও ব্যবস্থাই নেই। যার ফলে, দিনের
বেলা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলায় কখনওই সিএসটিসি-র সব বাস এক সঙ্গে রাস্তায় নামতে পারে না। পাশাপাশি, ভলভোর বাস সারাতে পারেন— এমন ইঞ্জিনিয়ার এবং তাঁদের উপরে নজরদারির সে রকম কোনও ব্যবস্থাও নেই সিএসটিসি-তে। এক পরিবহণ কর্তার মতে, ‘‘কোটি টাকার বাসের উপরে যে ধরনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় সেটাই নেই। ফলে, যা হওয়ার
তাই হয়েছে।’’
সিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথায়, ‘‘এত দিন ধরে আমাদের নিজেদের ইঞ্জিনিয়ারেরাই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দেখছিলেন। তাতে কিছু খামতি আছে। আমরা তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। ভোটের পরে ভলভো সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy