—প্রতীকী চিত্র।
পড়শি দেশে তাদের আসার উদ্দেশ্য, চুরি কিংবা লুঠপাট। অথচ সে জন্য তারা চোরাপথে নয়, সীমান্ত পেরোচ্ছে আইনি পথে।
বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে এ পারে ঢুকে জাল নোটের চক্রীদের কারবার চালানোর কথা আগেই জানা। কিন্তু কলকাতা ও আশপাশে চুরি-ডাকাতি করতে আসা বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরাও যে এখন বৈধ কাগজপত্র নিয়ে সীমান্ত পেরোচ্ছে, সেটা জেনে দুশ্চিন্তায় লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, মামুলি ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে দুষ্কৃতীরা শহরের লজ বা হোটেলে উঠছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা চিকিৎসা করাতে এখানে আসার কথা জানাচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০১৫-র অক্টোবরে হরিদেবপুর ও গত বছর জুনে সোদপুর— দু’জায়গায় দু’টি সোনার দোকানে ডাকাতি, চলতি বছর এপ্রিলে সোনারপুরে গয়নার দোকানে ডাকাতি ও মালিককে গুলি করে খুন, অগস্টে হাওড়া স্টেশন চত্বরে ও সেপ্টেম্বরে ধর্মতলায় দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চুরির ঘটনায় জড়িতদের একাংশ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে এ পারে ঢুকেছে।
লালবাজারের এক গোয়েন্দা-কর্তা বলছেন, ‘‘শহরের অপরাধ জগতে এটা নতুন প্রবণতা। এমনটা হলে সেই অপরাধীদের খবর সাধারণ অপরাধ জগত থেকে পেতে সমস্যা হবে। সেই জন্যই এটা চিন্তার কারণ।’’
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, কিছু দিন আগেও শহর ও আশপাশে মোটরবাইক চুরি করতে আসত বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। কিন্তু তারা সবাই ঢুকত চোরাপথে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক সীমান্ত দিয়ে। বাংলাদেশি ডাকাত বা লুটেরার দলও সেটাই করত। তবে এখন সন্দেহের ধরাছোঁয়া থেকে দূরে থাকতে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে সীমান্ত পেরোচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীর রাতে ধর্মতলার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ভল্ট কেটে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা চুরির ঘটনায় ধরা পড়েছে বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার সফিকুল ইসলাম। সে ওই চুরির ঘটনার চার দিন আগে বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছে উঠেছিল একটি লজে। যা ওই ব্যাঙ্কের আধ কিলোমিটারের মধ্যে।
তবে শুধু এই এক বারই নয়। তদন্তে জানা যাচ্ছে, সফিকুল অগস্ট মাসেও ওই লজে উঠেছিল। সে বারও সে চিকিৎসা করাতে কলকাতায় আসার কথা জানিয়েছিল লজে। পুলিশ জানিয়েছে, ২১ অগস্ট সফিকুল হানা দিয়েছিল হাওড়া স্টেশন চত্বরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। অবশ্য সে বার ভল্টের টাকা সে হাতাতে পারেনি। বাইরে থাকা লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পালিয়েছিল। ষষ্ঠীর রাতে সে অবশ্য ধর্মতলার ব্যাঙ্কের ভল্ট সাফ করে দেয়।
ওই ঘটনায় নিউ মার্কেট থানার পুলিশ হিলি থেকে সফিকুলের সহযোগী সন্দেহে রবীন্দ্রনাথ রায় নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের একাংশের দাবি, ধর্মতলার ব্যাঙ্কের ভল্ট সাফ করে সীমান্ত পার হওয়ার আগে সফিকুল ওই ব্যক্তিকে চুরি করা টাকার অর্ধেক দিয়েছিল। তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আরও কয়েক জন চুরিতে জড়িত। এদের কেউ কেউ পুরনো দুষ্কৃতী। কলকাতা, হাওড়ায় নিয়মিত যাতায়াতের সূত্রে কোন ব্যাঙ্কে হানা দেওয়া সহজ, সেটা তাদের জানা। কিন্তু এখন নিজেরা সরাসরি জড়িত থাকতে চাইছে না। ‘টার্গেট’ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সফিকুলের মতো বাংলাদেশের কোনও দুষ্কৃতীকে দিয়ে চোরাই টাকা বা জিনিসের ভাগ নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে চাইছে তারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা ও তার আশপাশের ব্যাঙ্ক বা সোনার দোকানে চুরি বা লুঠপাটের জন্য হানা দিতে প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করা বাংলাদেশের দুষ্কৃতীর পক্ষে সম্ভব নয়। স্থানীয় সাহায্য তাকে নিতেই হবে। তবে ইদানীং অপরাধের সময়ে সেই স্থানীয় সহযোগী থাকছে না, এমনকী অপরাধের জায়গা থেকে বহু দূরে সেই সহযোগীদের বাড়ি। ফলে, স্থানীয় সমাজ বিরোধীদের কাছ থেকে তাদের খবরও মিলছে না।
এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘সফিকুলকে ধরিয়েছে সিসিটিভির ফুটেজ। সব ক্ষেত্রে সেই সাহায্য মিলবে না।’’ তবে উপায়? ওই পুলিশকর্তার মত, ‘‘কলকাতার অপরাধ ঠেকাতে বা কিনারা করতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় সোর্স নেটওয়ার্ক থাকাটাও ক্রমশ জরুরি হয়ে পড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy