ফাইল ছবি
শেষমুহূর্তে নাটকীয় কোনও পট পরিবর্তন না হলে তৃণমূলের মুখপত্রে নিবন্ধ লেখার দায়ে প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাসকে সাসপেন্ড করতে চলেছে সিপিএম। মঙ্গলবার সিপিএম সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, আগামী শনিবার কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠকে অজন্তাকে কতদিন সাসপেন্ড করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অজন্তাকে সাসপেন্ড করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। তার মেয়াদ সর্বনিম্ন এক মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত হতে পারে। সেই মেয়াদের বিষয়টিই শনিবারের বৈঠকে নির্ধারিত হওয়ার কথা।
তৃণমূলের মুখপত্রে প্রথম কিস্তি উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখার পরেই অজন্তাকে শো কজ করা হয়েছিল। সিপিএম সূত্রের খবর, এরিয়া কমিটির তরফে দেওয়া সেই কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাবে অজন্তা লিখেছিলেন, পার্টি সদস্য হিসেবে তাঁর লেখায় কোনও ত্রুটি হয়ে থাকলে তা ইচ্ছাকৃত নয়। দলের একটি অংশ মনে করেছে, অজন্তার উত্তর ‘দায়সারা’ ছিল। অর্থাৎ, তাঁর জবাবে নিজের উপর ‘দায়’ নেওয়ার কোনও প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ চোখে প়ড়েনি। বরং তিনি বলতে চেয়েছেন, কোনও ভুল আদৌ হয়ে থাকলেও তা তাঁর ইচ্ছাকৃত নয়। ওই জবাবে সিপিএম নেতৃত্ব যে সন্তুষ্ট হননি, তা আগেই লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। বস্তুত, সেই জবাবের ভিত্তিতেই অজন্তাকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে খবর। অজন্তাকে শো কজ করেছিল সংশ্লিষ্ট এরিয়া কমিটি। অর্থাৎ, যে এলাকা থেকে অজন্তা পার্টির সদস্য, সেই এলাকার নেতৃত্ব। অজন্তা তাঁদেরই জবাব দিয়েছেন।
অজন্তার জবাব পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এরিয়া কমিটি অনিল-কন্যাকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশ-সহ বিষয়টি তারা পাঠিয়েছে সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির কাছে। সম্প্রতি কলকাতা জেলার সম্পাদকমণ্ডলী বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। সূত্রের খবর, সেখানে অজন্তাকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, এরিয়া কমিটি অজন্তাকে সাসপেন্ড করার যে সুপারিশ করেছিল, কলকাতা জেলার সম্পাদকমণ্ডলী সেটিই বহাল রেখেছে। তবে অজন্তাকে কতদিনের জন্য সাসপেন্ড করা হবে, তা ঠিক হবে কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠকে। আগামী শনিবার ওই বৈঠক হওয়ার কথা। প্রসঙ্গত, কলকাতা জেলা সম্পাদকমন্ডলী অজন্তাকে সাসপেনশনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা রাজ্যনেতৃত্বকে দিয়ে অনুমোদন করানোর প্রয়োজন নেই।
সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দল যদি মনে করে, কোনও পার্টি সদস্য দলবিরোধী কাজ করেছেন, তা হলে তাঁকে প্রথমে শো কজ করা হয়। শো কজের জবাবে দল সন্তুষ্ট না হলে সংশ্লিষ্ট সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়। তার মেয়াদ হতে পারে এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত। তবে ক্ষেত্রবিশেষে তিন মাস বা ছ’মাসও সাসপেনশনের মেয়াদ হতে পারে। সাসপেনশনের পরেও কোনও সদস্য দলবিরোধী কাজ করলে দল তাঁকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করতে পারে বা সরাসরি বহিষ্কার করতে পারে। উদাহরণ দিয়ে এক নেতা যেমন বলেছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন বলেছিলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত আমি এমন একটা দল করি, যারা বন্ধ ডাকে’’, তখন তাঁকে তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছিলেন। ঘটনাচক্রে, সেই অনিলের কন্যাই এখন সাসপেনশনের শাস্তির মুখে। তাঁর সেসপেনশনের মেয়াদ কত মাস হবে, সে বিষয়ে কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। ওই বৈঠকে কোন নেতা অজন্তার বিষয়ে কী বলেন, তা-ও প্রণিধানযোগ্য।
এমনিতে অজন্তা দলের ‘সক্রিয়’ সদস্য নন। গত ২০ বছর তিনি দলের কোনও কর্মসূচিতে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছেন বলেও কেউ মনে করতে পারছেন না। তিনি একজন সাধারণ সদস্য হিসেবেই দলে রয়েছেন। অজন্তা পেশায় ইতিহাসের অধ্যাপক। তিনি সক্রিয় রাজনীতির চেয়ে অধ্যাপনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তবে তৃণমূলের মুখপত্রে তাঁর নিয়মিত নিবন্ধ এবং সেখানে অন্যান্য মহিলা রাজনীতিকের পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা সিপিএমকে আরও বেশি রুষ্ট এবং কুপিত করেছে। সাধারণ ভাবে তৃণমূলের মুখপত্রে লেখা প্রকাশিত হওয়াতেই বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। অজন্তার লেখায় মমতার বেনজির প্রশংসা এবং সিঙ্গুর আন্দোলনকে ‘গণবিক্ষোভ’ বলা তাঁদের আরও উষ্মার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার, সাসপেন্ড হওয়ার পরেও অজন্তা এমনকিছু করেন কি না, যা সিপিএমকে আরও বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে। নাকি তিনি ওই শাস্তি নীরবে হজম করে বিষয়টির এখানেই ইতি টানেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy