Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

তর্ক থাক, বঙ্গে পৃথক পথ খুঁজছে সিপিএম

এর মানে অবশ্যই এই নয় যে, রাত পোহালেই সিপিএম ভেঙে বাংলার জন্য আলাদা কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হবে! যাঁরা নতুন ভাবনা ভাবছেন, তাঁরা অন্তত আগামী বছরের হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত দেখতে চান।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৭
Share: Save:

অনেক হয়েছে। আর না!

দু’দশকে বারবার চার বার তাঁদের মতকে উপেক্ষিত হতে দেখে এ বার তর্ক ছেড়ে বেরিয়ে হেস্তনেস্ত চাইছেন বঙ্গের সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ। শুরু হয়েছিল জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাবে ‘না’ দিয়ে। তার পরে মনমোহন সিংহের ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দরজা খুলে দেওয়া, লোকসভার স্পিকার পদ ছাড়তে না চাওয়ায় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পত্রপাঠ বহিষ্কার এবং অতি সম্প্রতি সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় ফের প্রার্থী করতে না চেয়ে তৃণমূলকে আবার কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া। এই সব সিদ্ধান্তেই শেষমেশ বাংলায় সিপিএমের ক্ষতি হয়েছে মনে করে এ বার অন্য পথ দেখতে চাইছেন এ রাজ্যের নেতাদের একাংশ।

প্রকাশ কারাটদের মতের কাছে বারবার নতিস্বীকারে বাধ্য হওয়ার পরে এ রাজ্যের সিপিএমের ওই একাংশ বাংলার জন্যই আলাদা দল গড়ার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। বাম জমানায় তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বের মনোভাবে বিরক্ত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে দল ভেঙে বেরিয়ে এসে আলাদা তৃণমূল গড়ে তুলেছিলেন শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্যই, এই ভাবনাও অনেকটা সে রকম। এই ভাবনার নেপথ্যে যাঁরা আছেন, ঘটনাচক্রে তাঁদের বেশির ভাগই সিপিএমের রাজনীতিতে ‘সুভাষপন্থী’ (চক্রবর্তী) নেতা বলে পরিচিত। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এমনই এক সদস্য দিল্লি গিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েক জনের সঙ্গে দেখা করেও বাংলার জন্য আলাদা দলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে এসেছেন। এখন আর দলে নেই, এমন দু-এক জন বর্ষীয়ান নেতাও এই আলাদা পথের সওয়ালের শরিক।

আরও পড়ুন:দ্রুত বিদায় ঘূর্ণাবর্তের, স্বস্তি বঙ্গে

এর মানে অবশ্যই এই নয় যে, রাত পোহালেই সিপিএম ভেঙে বাংলার জন্য আলাদা কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হবে! যাঁরা নতুন ভাবনা ভাবছেন, তাঁরা অন্তত আগামী বছরের হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত দেখতে চান। তখনও যদি কারাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার চাপে দলের লাইন না বদলায়, তার পরে কাজে গতি আসবে। বঙ্গপন্থী ভাবনার এক নেতার কথায়, ‘‘কী করলে বাংলায় দলটা বাঁচবে, আমরা বলতে পারব না! কেরল অন্ধ্র বা গুজরাটের নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভোট দিয়ে যা ঠিক করে দেবেন, সেটাই হবে! এই ভাবে আর কত দিন চলা সম্ভব?’’

কারাট শিবিরের মতে অবশ্য কোনও পরিবর্তনের লক্ষণ এখনও নেই। বরং, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কারাট-সম্পাদিত মুখপত্রে এ বার সম্পাদকীয় লিখে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিজেপি-র বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে নিয়ে কোনও বিরোধী জোট সম্ভব নয়। নরেন্দ্র মোদীরা যে আর্থিক নীতি নিয়ে চলছেন, কংগ্রেস তারই পথ প্রদর্শক। আর আঞ্চলিক দলগুলির যে কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, নীতীশ কুমারের ডিগবাজিই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিরোধী জোট নিয়ে না ভেবে আন্দোলনে বেশি বেশি মানুষকে টেনে আনার কথাই বলা হয়েছে সেখানে।

বাংলার নেতাদের একাংশের ধারণা, এই লাইনকে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসেও পাশ করাতে মরিয়া হবেন কারাটেরা। এবং তখনই ঠিক করতে হবে, এই পথই শিরোধার্য কি না! আর এই বিতর্কের আবহেই আজ, সোমবার থেকে আলিমুদ্দিনে শুরু হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। ইয়েচুরি-প্রশ্নে যেখানে ফের উত্তাপ ছড়ানোর সম্ভাবনা!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE