গাড়িতে বসে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।—নিজস্ব চিত্র।
বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিতে ঝালদা থেকে সাত সকালে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন খেদন মাহাত। হাতে লাল ঝান্ডা। মুখে, স্লোগান। খেদন ভিড়ের মধ্যে নেতা গোছের কাউকে দেখতে পেলেই জিজ্ঞেস করছিলেন, “ও দাদা, বুদ্ধবাবু আসবেন না? সে বারে তো এসেছিলেন। এ বার আসবেন না?” ঝালদা, সারেঙ্গা, বাঁকুড়া, মালদা, বীরভূম, পুরুলিয়া-সহ প্রায় সব জেলা থেকেই এসেছিলেন বাম কর্মী সমর্থকরা। প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন, বুদ্ধবাবু আসবেন তো?
ব্রিগেডের দায়িত্বে থাকা নেতানেত্রীরা তখনও কথা দিতে পারছিলেন না। কী বলবেন বুঝতে না পেরে স্লোগান দিতে শুরু করলেন সকলে। ইতিমধ্যেই ব্রিগেডে পৌঁছে গিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব-সহ পার্টির প্রথম সারির নেতানেত্রীরা।
দুপুর ১ টা ১০ মিনিট। হঠাৎ পুলিশি তৎপরতা দেখে গুঞ্জন শুরু হল- বুদ্ধবাবু আসছেন। এটা যে শুধু গুঞ্জন নয়, তা কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল। ফোর্ট উইলিয়ামের দিক থেকে সাদা অ্যাম্বাসাডর দেখে জন সমুদ্রের মধ্যে কালো মাথার ঢেউ উঠতে শুরু করল। ভিড় ঠেলে মঞ্চের পিছনে এসে থমকাল গাড়ি।
আরও পড়ুন: আগে দিল্লি থেকে মোদীকে তাড়ান, তার পর এখান থেকে মমতাকে, ব্রিগেডে ডাক বামেদের
মানুষের ভিড়, স্লোগান দেখে বোঝা গেল, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জনপ্রিয়তা বামেদের মধ্যে এতটুকু কমেনি। সাদা চুল, ধবধবে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পড়ে তিনি বসে রয়েছেন গাড়ির ভিতরে। নাকে লাগানো অক্সিজেনের নল। ওই সাদা গাড়ি ঘিরে রেখেছে মানববন্ধন।
কর্মীরা যে তাঁকে চাইছেন ব্রিগেডের মঞ্চে, সে বার্তা আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছিল, এই ধুলো ভরা ব্রিগেডে গেলে শারীরিক সমস্যা হতে পারে। শরীর দিচ্ছে না ঠিকই। নিয়মিত আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও যান না। কিন্তু এ যে ব্রিগেড! তিনি কী আর ঘরে বসে থাকতে পারেন। না, পারলেনও না। অসমর্থ শরীর নিয়েই শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন ব্রিগেডে সমাবেশে।
আরও পড়ুন: রাজীব কুমারের ভূয়সী প্রশংসা করে মমতার টুইট: ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি’
কিন্তু তিনি কী নামবেন? মঞ্চে উঠবেন? বক্তৃতা দেবেন? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সমর্থক থেকে শুরু করে নেতানেত্রীদের মধ্যে। পুলিশও জানে না কী হবে। প্রায় এক ঘণ্টা তিনি গাড়িতে বসে রইলেন। মঞ্চ থেকে একে একে নেমে এসে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে কথা বলছেন সিপিএম নেতারা। চলে এলেন সীতারাম ইয়েচুরিও। গাড়িতে বসেই তিনি পরামর্শ দিলেন সবাইকে। শেষ পর্যন্ত মঞ্চে উঠতে পারলেন না ঠিকই, বক্তৃতা দিলেন না ঠিকই, কিন্তু তিনিই রইলেন এ দিনের ব্রিগেডের কেন্দ্রে। ঘণ্টাখানেক থেকে, লড়াইয়ের সুর বেঁধে দিয়ে চলে গেলেন আবার বাড়ির পথে!
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy