শতরূপের বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট। গ্রাফিক — শৌভিক দেবনাথ।
তিনি এক সময়ের ছাত্রনেতা। সেই তিনিই ছাত্রদের খোঁচা দিয়ে মজা নেওয়ার ‘ট্রেন্ড’-এ বাকিদের সঙ্গে গা ভাসালেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই একের পর এক ব্যঙ্গচিত্রে ভরে গিয়েছিল নেটমাধ্যম। বামনেতা শতরূপ ঘোষকেও দেখা গেল স্রোতে গা ভাসিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে ব্যঙ্গ করতে। কিছুদিন আগেও এসএফআইয়ের রাজ্যস্তরের নেতা ছিলেন শতরূপ। ফেসবুকে এই তরুণ বাম নেতা লিখলেন, ‘একসাথে ৭৯ জন ছায়া প্রকাশনীর মডেল!’ যা দেখে বিস্মিত নেটপাড়া।
ছাত্রছাত্রীদের সহায়ক বই প্রকাশক ওই সংস্থা প্রতিবছর মাধ্যমিকের প্রথম স্থানাধিকারীদের তাঁদের বিজ্ঞাপনের মুখ বানায়। সেদিকেই শতরূপের ব্যঙ্গাত্মক ইঙ্গিতকে তুলোধনা করেছেন নেটাগরিকরা। তাঁদের প্রশ্ন, নিজে প্রাক্তন ছাত্র নেতা হয়ে ছাত্রছাত্রীদের লক্ষ্য করে কী ভাবে ওই মন্তব্য করলেন শতরূপ!
করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা না হওয়ায় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তবে মঙ্গলবার মাধ্যমিকে ছাত্র ছাত্রীদের পাওয়া সর্বোচ্চ নম্বর জানিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সভাপতি কল্যাণময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন ৭০০-র মধ্যে ৬৯৭ পেয়েছেন ৭৯ জন। তারপরই এই ৭৯ জনকে প্রথম স্থানাধিকারি ধরে নিয়ে নেটমাধ্যম, বিশেষত ফেসবুক একাধিক ব্যঙ্গচিত্রে ভরে যায়। ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যকারীরা অবশ্য নেটাগরিকদের একাংশের আক্রমণের মুখেও পড়েন। তাঁদের রূচিবোধ এবং শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেহাই দেওয়ার আবেদন জানান নেটাগরিকরা। কিছু পরে দেখা যায় তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ বামনেতা এবং একসময়ের ছাত্রনেতাও সেই ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যের জোয়ারে গা ভাসিয়েছেন।
শতরূপের পোস্টেও প্রতিবাদ জানিয়ে নেটাগরিকদের প্রতিক্রিয়া আসতে দেরি হয়নি। ওই ফেসবুক পোস্টে শতরূপের সমালোচনা করে মন্তব্য করেন অনেকেই। কেউ লেখেন, ‘ছায়া প্রকাশনীর ৭৯ জন মডেল হয়ে গেল কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত শিক্ষিত রাজনৈতিক দল একটি আসনও পেল না।’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘মাধ্যমিকের ফেলের হার এবং সিপিএমের বিধায়কদের সংখ্যা এক।’ কেউ আবার শতরূপকে ব্যক্তিগত স্তরেই আক্রমণ করে লিখেছেন, ‘শতরূপ ঘোষ,মান আর হুঁশ সম্পন্ন হলেই তবে মানুষ বলে তাকে। আপনার উপর ভীষণ করুণা হল আমার। আপনার যাপনে আর মননে শিক্ষা কি প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে এর পর। আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ হলেও কিন্তু তা যে অসাধারণ প্রমাণ করলেন আপনিও তাদের অর্থাৎ ট্রোলারদের একজন হয়ে।’
এই বিষয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে শতরূপকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তবে এসএফআইয়ের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা বর্তমানে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের ফলাফল নিয়ে এসএফআই যে বিবৃতি জারি করেছে, সেটাকেই সংগঠনের বিবৃতি হিসেবে ধরা হোক। ১০০ শতাংশ পাশ করেছে বলেই ছাত্রছাত্রীদের দায়ী করা ঠিক নয়। কারণ, পরীক্ষা দিতে ছাত্রছাত্রীরা রাজি ছিলেন। সরকারই তাঁদের পরীক্ষা নিতে পারেনি। তাই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাতে কেউ বিরূপ মন্তব্য না করেন, সে দিকে আমাদের সবাইকেই নজর রাখতে হবে। সঙ্গে পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের যাতে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা যায়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy