ছবি: এএফপি।
অসচেতনতার মাসুল দিল দ্বিতীয় করোনা আক্রান্তের পরিবার। লন্ডন ফেরত ওই ব্যবসায়ী-পুত্রের সংস্পর্শে আসার জেরে রাজ্যে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল সাত। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে ওই তরুণের বাবা, মা এবং বাড়ির পরিচারকের শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ মিলেছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের খবর।
গত ১৩ মার্চ লন্ডন থেকে কলকাতায় ফেরেন বালিগঞ্জের বাসিন্দা। শহরে ফেরার ছ’দিনের মাথায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে জ্বর, কাশির উপসর্গ নিয়ে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। তরুণ প্রথমে দাবি করেছিলেন, কলকাতায় ফিরে তিনি ‘হোম কোয়রান্টিনে’ ছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, কালীঘাটে বাবার দোকানের পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে কফিশপে গিয়েছিলেন তরুণ। তাঁর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা ৫০ ছাড়িয়েছিল।
শনিবার তরুণের বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বাবা আক্রান্ত হওয়ায় এখন তাঁর কর্মস্থলে সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন তা দেখা হচ্ছে। পরিচারকের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খোঁজেও নেমে পড়েছে স্বাস্থ্য ভবন।
আরও পড়ুন: নবান্নে সর্বদল আজ, বিরোধীদের দাবি খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার
চতুর্থ আক্রান্ত তথা দক্ষিণ দমদম এলাকার প্রৌঢ়ের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকাও স্বাস্থ্য দফতরকে উদ্বেগে রেখেছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক পরিজনের বিয়েতে যোগ দিতে বিলাসপুর গিয়েছিলেন আক্রান্ত প্রৌঢ়। ২ মার্চ পুণে-হাওড়া আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেসে তিনি কলকাতা ফেরেন। এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্রের পুণেতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ফলে রেলপথেই ভাইরাস তাঁর দেহে ঢুকেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই রেলকর্মী এখন সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
কাদের পরীক্ষা
• বিদেশ থেকে আসার ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট) থাকলে
• আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা লক্ষণযুক্ত সকলের
• উপসর্গ থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের
• জ্বর, কাশি, প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের
• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতো পর্যাপ্ত রক্ষাকবচ ছাড়া আক্রান্তের কাছে ছিলেন যে স্বাস্থ্যকর্মীরা, উপসর্গ না-থাকলেও সংস্পর্শে আসার ৫-১৪ দিনের মধ্যে পরীক্ষা
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, চতুর্থ আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা এখনই ৩০০ ছাড়িয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৮৪ জন রেলযাত্রী। কলকাতায় ফিরে পাঁচ দিন অফিসও করেছিলেন তিনি। ১০ মার্চ অসুস্থ বোধ করার আগে জন্মদিন উপলক্ষে স্ত্রী’র সঙ্গে নিউটাউনের একটি শপিং মলে যান ৫৭ বছরের ওই প্রৌঢ়। সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে দু’জন চিকিৎসক তাঁকে দেখেন। এক জন ল্যাব-টেকনিশিয়ান বাড়িতে এসে তাঁর রক্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। এক্স-রে-র জন্য স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও গিয়েছিলেন তিনি। যে রিকশায় চড়ে প্রৌঢ় সেন্টারে গিয়েছিলেন, তার চালক এবং ওই সেন্টারের এক জন প্রৌঢ়ের সংস্পর্শে এসেছিলেন। বাড়ির দুই পরিচারিকা এবং প্রতিবেশী বৃদ্ধ দম্পতিকেও পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন।
চতুর্থ আক্রান্তের গতিবিধি
• আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন তিনশোরও বেশি। শুধু ট্রেনেরই ২৮৪ জন যাত্রীকে কোয়রান্টিন।
• বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষ নজরে ১৫ জন। পর্যবেক্ষণে ৩৫
• ২৬ ফেব্রুয়ারি: পারিবারিক বন্ধুর বিয়েতে হাওড়া-মুম্বই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে সস্ত্রীক বিলাসপুর গিয়েছিলেন। সেখানে আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন।
• ২ মার্চ: পুণে-হাওড়া আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেসে কলকাতা ফেরেন।
• ৩-৭ মার্চ: আক্রান্ত রেলকর্মী চারদিন অফিস করেন।
• ৮ মার্চ: জন্মদিন উপলক্ষে নিউ টাউনে অবস্থিত শপিং মলে গিয়েছিলেন। সেখানে কেনাকাটা এবং খাওয়া-দাওয়া করেন।
• ৯ মার্চ: বাড়িতেই দোল খেলেন।
• ১০ মার্চ: জ্বর আসে। পর দিন সকালে স্বাভাবিক থাকলেও রাতে আবার জ্বর।
• ১২ মার্চ: স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে যান। পর দিন অন্য এক চিকিৎসককে দেখালে তিনি বুকের এক্স-রে করানোর পরামর্শ দেন।
• ১৪ মার্চ: চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে ব্রঙ্কাইটিস ধরা পড়ে।
• ১৬ মার্চ: রাতে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, গত ১৬ মার্চ প্রৌঢ় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। আইসোলেশনে স্থানান্তর করার আগে প্রৌঢ় জেনারেল ওয়ার্ড এবং আইসিইউয়ে ছিলেন। যার প্রেক্ষিতে ‘হাই রিস্ক’ হিসেবে ওই হাসপাতালের ১৫ জন এবং ৩৪ জনকে ‘লো রিস্ক’ ক্যাটেগরিতে রাখা হয়েছে। আইসিএমআরের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৫ জনের পরীক্ষা হওয়া আবশ্যক। বাকি ৩৪ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। প্রৌঢ়ের চিকিৎসা করানোর সময় রক্ষাকবচ পরে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করেছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সব রকম সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy