বৃহস্পতিবার বিলে সই করেছেন রাজ্যপাল। শুক্রবারই রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ কমিশন (ওয়েস্টবেঙ্গল হেল্থ রেগুলেটরি কমিশন) গড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট আইনে সংশোধনী পাশ করিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে রাজ্য সরকার। লাগামছাড়া বিল এবং চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগে রাশ টানতেই এই ব্যবস্থা। নতুন কমিশনের হাতে দেওয়ানি আদালতের সমান ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যদিও কমিশনের মাথায় কর্মরত বিচারপতির নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে কমিশনের সদস্য হিসেবে এক প্রবীণ চিকিৎসকের নাম নিয়েও।
শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী কমিশন গঠনের কথা ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীমকুমার রায়। তিনি এখনও কর্মরত। পাঁচ মাস পরে অবসর নেবেন। এক জন কর্মরত বিচারক কী করে সরকার-গঠিত কমিশনের প্রধান হবেন? এই প্রশ্ন নিয়ে এ দিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে বাম প্রতিনিধিদল। পরে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনও বিচারপতি যদি সরকারি কমিশনেও থাকেন, তা হলে তাঁর কাছে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা এলে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে কি না, তা নিয়ে মানুষ চিন্তিত।’’ যদিও মমতা নবান্নে জানান, বিচারপতি রায় এখনই দায়িত্ব নিতে না-পারলে তাঁর জায়গায় দায়িত্ব সামলাবেন কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অনিল বর্মা। স্বরোজগার বিষয়ক দফতরের সচিব তিনি, মুখ্যমন্ত্রীর খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপদেষ্টা।
মনোনীত এক চিকিৎসককে নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তিনি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায়। ‘পিপলস ফর বেটার ট্রিটমেন্ট’ সংস্থার পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সংস্থার কর্ণধার কুণাল সাহা দাবি করেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সুকুমার মুখোপাধ্যায়কে চিকিৎসায় গাফিলতি সংক্রান্ত একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছে। কুণালবাবুর বক্তব্য, ‘‘সরকার সিদ্ধান্ত বদল না করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’’ কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ভারসাম্য রেখে, নিরপেক্ষ ভাবে কমিশন তৈরি হয়েছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্তা, পুলিশকর্তা, ক্রেতাসুরক্ষা কর্তারা এতে রয়েছেন। রাজনৈতিক দলের কেউ নেই।’’
কমিশনের কাছে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করতে পারবেন মানুষ। কমিশন যাতে দ্রুত কাজ শুরু করে, সে জন্য অফিস দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ঘোষণা মানেই কাজ শুরু হয়ে যাওয়া।’’ প্রতি জেলাতেও জেলাশাসকের নেতৃত্বে গঠিত নির্দিষ্ট কমিটির কাছে চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগ জমা দেওয়া যাবে। কমিটি সেই অভিযোগ কমিশনে পাঠিয়ে দেবে। কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে তারাও অভিযোগ কমিশনে পাঠাবে। সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ তুলে ভাঙচুর ও ডাক্তারদের উপর হামলার একাধিক নজির রয়েছে। এই ধরনের চরমপন্থী পথে না গিয়ে মানুষকে কমিশনের দ্বারস্থ হতে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ দায়েরের জায়গা হয়েছে, আইন হাতে তুলে না নিয়ে এখানে আসুন।’’
এই নতুন আইন ও নতুন কমিশনকে ঘিরে খানিকটা আতঙ্কে বেসরকারি হাসপাতালগুলি। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের বলেছেন, সৎ-মানবিক চিকিৎসকদের সঙ্গে সরকারের লড়াই নেই। চিকিৎসকদের জব্দ করতে যে এই কমিশন নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা ভাল কাজ করেন তাঁদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যে সব সংস্থা পরিষেবাকে অন্যরকম ভাবে ব্যবহার বা অপব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ।’’
কিছু হাসপাতাল ব্যবসা গোটানোর কথা বলে চাপ তৈরি করছে বলে দাবি করে মমতা বলেন, ‘‘ক’জন যাবে রাজ্য ছেড়ে? অভিযোগ রয়েছে ছ’সাত জনের বিরুদ্ধে। যদি কেউ শোধরাতে চায়, সুযোগ দিচ্ছি। অ্যাপোলো কথা বলতে চেয়েছে, সময় দিয়েছি। ব্যবসা বন্ধ করে দেব বলে ব্ল্যাকমেল করলে সেটা মানতে হবে?’’
পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ কমিশন
চেয়ারম্যান
বিচারপতি অসীমকুমার রায়, কলকাতা হাইকোর্ট
ভাইস চেয়ারম্যান
অনিল বর্মা, রাজ্য স্বরোজগার দফতরের সচিব
বাকি ১১ সদস্য
সুকুমার মুখোপাধ্যায়, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
গোপালকৃষ্ণ ঢালী, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট
অভিজিৎ চৌধুরী, হেপাটোলজিস্ট
মাখনলাল সাহা, সার্জন
মধুসূদন বন্দ্যোপাধ্যায়, গাইনোকোলজিস্ট
মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়, বায়োকেমিস্ট্রি বিশেষজ্ঞ
সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ, পরিবার-কল্যাণ কমিশনার
অনুজ শর্মা, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)
প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী, ডিসি সাউথ (কলকাতা)
মাধবী দাস, যুগ্ম অধিকর্তা (নার্সিং)
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা (পদটি এখন ফাঁকা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy