রেলের তরফে ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, ঘটনাটি সম্ভবত ঘটেছে বিহারের মাটি থেকে। ছবি: সংগৃহীত।
বন্দে ভারত নিয়ে রাজ্যের নিন্দায় মত্ত বাংলার বিজেপি আচমকাই বেসামাল। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়ার ঘটনাটি বিহারের মাটিতে হয়েছে জানা মাত্রই সুর বদলালেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা। এর আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, বাংলা ভাল কিছু পাওয়ার যোগ্য নয়। এমনকি, বন্দে ভারতে ঢিল ছোড়ার ঘটনাটির সিবিআই তদন্তও চেয়েছিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার সেই বিজেপিরই সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা বাংলার নেতা দিলীপ ঘোষ বললেন, ‘‘বিহার থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে তা জানব কী করে?’’ তৃণমূল অবশ্য বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেছে, ‘‘এত রাজনীতির চেষ্টা সব মাঠে মারা গেল।’’
বন্দে ভারতে পাথর ছোড়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবারই প্রকাশ্যে এসেছে একটি নতুন তথ্য। যা জানিয়েছে খোদ রেল কর্তৃপক্ষ। পূর্বরেলের জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী জানান, বন্দে ভারতে পাথর ছোড়ার বিষয়ে তাঁদের হাতে কিছু তথ্য হাতে এসেছে। ট্রেনে লাগানো সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, বন্দে ভারতে যখন পাথর ছোড়া হয়েছে তখন সেটি যাচ্ছিল বিহারের মধ্যে দিয়ে। এমনকি, ট্রেনের পাশে বেশ কয়েক জনকে দাঁড়িয়েও থাকতে দেখা যায়। একলব্য জানান, তাঁরা প্রাথমিক ভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ওই এলাকাটি বিহারে। ফলে বাংলা থেকে বন্দে ভারতে পাথর ছোড়া হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। এর পরই বিজেপি নেতা দিলীপকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ওই জবাব দেন। দিলীপ বলেন, ‘‘এক দিন নয়, দু’দিন ঘটেছে এই ঘটনা। আর এক দিন মালদহেও ঘটেছে। হতে পারে জায়গা দুটো কাছাকাছি। কিন্তু বাংলায় তো এমন ঘটনা নতুন নয়, তাই বিজেপি বলেছে। এর আগে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসেও ঢিল মারা হয়েছিল। সেটাকে তো আর বাংলার বাইরে বলা যায় না।’’ এমনকি বন্দে ভারত নিয়ে রাজ্যের প্রশাসনকে আক্রমণের সপক্ষে টেনে আনেন পুরনো প্রসঙ্গও। দিলীপ বলেন, ‘‘গোটা পশ্চিমবঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভের সময় তো রেলের আড়াইশো কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল বাংলাতেই।’’ যদিও দিলীপ প্রকাশ্যে এসে বিজেপির আক্রমণের জবাব দিলেও সুকান্ত এবং শুভেন্দুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার এই বিতর্কে রাজ্যের শাসক দলের হয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘বাংলায় যারা রয়েছেন, বিজেপি নেতাদের বাংলা এবং বাঙালি বিদ্বেষ একমাত্র লক্ষ্য। বাংলাকে বদনাম করা, বাংলার অপমান করা তাঁদের একমাত্র কাজ। বন্দে ভারত চলার দু’মাসের মধ্যে বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে আক্রমণ হয়েছিল বন্দে ভারতের উপর। উত্তরপ্রদেশে কাদের শাসন চলে আমরা জানি। তার পরও এরা নির্লজ্জের মতো বাংলা থেকে নির্বাচিত হয়ে বাংলার মানুষের ভোট পেয়ে বাংলার বিরুদ্ধাচরণ করে। বাংলাকে দেশের মানচিত্রে কালিমালিপ্ত করতে চায়। বাংলার মানুষ এ সব দেখছে। তারা আগামী নির্বাচনে এর জবাব দেবে।’’
টুইট করে দেবাংশু ভট্টাচার্যও লেখেন, ‘‘পূর্ব রেলের অধিকর্তা স্বীকার করে নিলেন বন্দে ভারতে পাথর ছোড়ার ঘটনা বাংলার নয় বিহারের। বিজেপি নেতাদের মিথ্যাচার, বাংলার মুখে কালি লাগানো এবং সাম্প্রদায়িত রাজনীতির মরিয়া চেষ্টা মাঠে মারা গেল।’’
বন্দে ভারত প্রসঙ্গে বুধবার মতামত জানিয়েছে সিপিএমও। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ট্রেনে হামলা কোনও রাজনৈতিক দল সংগঠন করে বলে মনে হয় না। যাত্রীদের ক্ষোভ থেকে হতে পারে। যে কোনও ঘটনাকেই রাজনীতির রং দেওয়া উচিত নয় তাতে রাজনীতি দুর্বল হয়। এতে কোনও রাজনৈতিক দলের উপকার হয় না দুষ্কৃতীকারীদের উপকার হয়। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজার কোনও মানে হয় না।’’
কিন্তু বিজেপি কী বলছে? বন্দে ভারতে এক্সপ্রেসে আক্রমণের ঘটনাকে হাওড়া স্টেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে ওঠা জয় শ্রীরাম স্লোগানের পাল্টা বলে মন্তব্য করেছিল রাজ্যের বিজেপি নেতারা। তাই প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রশাসনকে দোষারোপ করার আগে কি সচেতন হওয়ার দরকার ছিল না? জবাবে দিলীপ জানিয়েছেন, আমরা কী করে জানব! সংবাদমাধ্যমেই তো সম্প্রচার হয়েছিল, তারা তো আর বলেনি বিহারে পাথর ছোড়া হয়েছে। তৃণমূলেরই কি কেউ বলেছিল বিহারে ছোড়া হয়েছে। তা হলে আমরা জানব কী করে!
কিন্তু না জেনে বা যাচাই না করে কি এ ভাবে কোনও সরকারকে দোষারোপ করা ঠিক? সামান্য থমকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির জবাব, ‘‘রেলের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বাংলায়। পুরুলিয়া এক্সপ্রেসেও হয়েছে। বন্দে ভারতে মালদহে হামলা হয়েছে। সেগুলো বিহারে হয়নি। তাই বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy