ভারতীয় সেনার বাঙালি কমান্ডো ঝন্টু আলি শেখের দেহের ময়নাতদন্ত শেষ সেনা হাসপাতালে। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সব ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছে। দেহ কফিনবন্দি করার আগে তা পরিবারের কাউকে দেখানোই নিয়ম। তাই ডাক পড়ল দাদার। স্ট্রেচারে শোয়ানো ভাইকে ‘শহিদ শ্রদ্ধার্ঘ্য’ জানালেন সেনাবাহিনীর সুবেদার রফিক শেখ। পাশে দাঁড়িয়ে মুহ্যমান রফিককে সান্ত্বনা দিলেন তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা শেখ। তিনিও কাশ্মীরে সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে শোরগোলের আবহেই বৃহস্পতিবার জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জম্মুতে নিহত হন ঝন্টু। নদিয়ার তেহট্টের বাসিন্দা ঝন্টু ৬ প্যারাশুট রেজিমেন্ট স্পেশাল ফোর্সের হাবিলদার পদে কর্মরত ছিলেন। জম্মুর উধমপুর জেলার ডুডু-বসন্তগড়ের পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গিদের গতিবিধির খবর পেয়ে সে দিন ভোর থেকে চিরুনি তল্লাশিতে নেমেছিল সেনার ৬ প্যারা, হোয়াইট নাইট কোর এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের যৌথ বাহিনী। অচিরেই বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গুলিযুদ্ধ শুরু হয়। জঙ্গিদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ঝন্টু। সেনা জানিয়েছে, চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝন্টুর মৃত্যুর খবর নদিয়ার তেহট্টের পাথরঘাটা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছিল। পরিবার সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে ঝন্টুর দেহ কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছোতে পারে। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হতে পারে ব্যারাকপুর সেনা হাসপাতালে। এর পর শনিবার সকালে তেহট্টের বাড়িতে পৌঁছোতে পারে দেহ। শুক্রবার সকাল থেকে পাথরঘাটার বাড়িতে পাড়াপড়শিদের ভিড়। এসেছেন বন্ধু সামিরুলও। তিনি বলেন, ‘‘ঝন্টু ছুটিতে এলে আমার দোকানেই বসত। ওর মুখে কাশ্মীরের কত ঘটনা শুনেছি! শিউরে উঠেছি সে সব শুনে।’’
পড়শি সাহাবুদ্দিন মণ্ডলও একদা সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তিনিও বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে ওরা তিন ভাই সেনাবাহিনীতে কাজ করবে বলে স্বপ্ন দেখত। আমাকেও বলত। সেই কারণেই ছোট থেকে দৌড়, খেলাধুলো, শারীরিক কসরত করত। ওর দাদা রফিকুল প্রথমে সেনাবাহিনীতে চাকরি পায়। এখন সে সুবেদার পোস্টে কাশ্মীরে কর্মরত। ওকে দেখেই আরও উৎসাহ পেয়ে গিয়েছিল ঝন্টু। অনেক পরিশ্রম করেছিল। ২০০৮ সালে চাকরি পায়। বড্ড ভাল ছেলে ছিল ঝন্টু। ছুটিতে এলেই সকলের সঙ্গে কথা বলত। গ্রামের ছেলেদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহ দিত।’’