এর পরেও কেন্দ্রীয় হারের চেয়ে প্রায় ২৪ শতাংশ পিছিয়ে থাকবে রাজ্য। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
চলতি মাসেই মিটিয়ে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)। জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমের ইলামবাজারে এক সভায় তিনি বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন।
তবে ডিএ সংক্রান্ত এই ঘোষণা নতুন কিছু নয় বলে একাধিক কর্মী সংগঠনের দাবি। সংগঠনগুলি বলছে, ২০১৮-র জুন মাসেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে, সরকারি কর্মীদের বর্ধিত হারে ডিএ দেওয়া শুরু হবে ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে। সেই ঘোষণাই যে রূপায়িত হতে চলেছে।
বর্ধিত হারে ডিএ পাওয়ার আগে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে এ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ডিএ-র ফারাক প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। এ মাস থেকে বর্ধিত হারে ডিএ পেলে সেই ফারাক কমবে ঠিকই। কিন্তু তার পরেও কেন্দ্রীয় হারের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ পিছিয়ে থাকবে রাজ্য। জানাচ্ছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। তবে, তৃণমূলের কর্মী সংগঠনের তরফে মনোজ চক্রবর্তী দাবি করেছেন, ২৫ শতাংশ নয়, ৪৮ শতাংশ বকেয়াই মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চাষির জন্য ১০ হাজার কোটি, বোলপুরে ঘোষণা মমতার
এত দিন ১০০ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছিলেন সরকারি কর্মীরা। কিন্তু অনেক দিন ধরেই কর্মী সংগঠনগুলি ডিএ-র হার সংশোধনের দাবি জানাচ্ছিল। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার দাবি তুলছিল সংগঠনগুলি। অবশেষে ২০১৮-র জুনে তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠনের একটি সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডিএ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। ১০০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। ২০১৮-র জুনে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা করেছিলেন ঠিকই। তবে তখন থেকেই ওই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে নতুন হারে ডিএ মিলবে।
যদি ৪৮ শতাংশ বকেয়া না মিটিয়ে আগের ঘোষণা মতো ১২৫ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, তা হলে কার্যক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ডিএ কিন্তু বাড়ছে না। দীর্ঘ দিন বেতনক্রম সংশোধন না হওয়ায় রাজ্য সরকার এত দিন ১০০ শতাংশ ডিএ-র পাশাপাশি ১০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা (আইআর) দিচ্ছিল। পে কমিশনের নতুন সুপারিশ কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ওই ১০ শতাংশ আইআর দিয়ে যেতে হবে— নিয়ম এমনটাই। কিন্তু রাজ্য সরকার ১৮ শতাংশ ডিএ বাড়াচ্ছে এবং ১০ শতাংশ আইআর-কে ৭ শতাংশ ডিএ হিসেবে জুড়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ২৫ শতাংশ ডিএ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ১০ শতাংশ আইআর-কে ৭ শতাংশ ডিএ-তে পরিণত করতে গিয়ে টাকার অঙ্ক কিছুটা কমেও যাচ্ছে। তা নিয়ে কর্মীদের ক্ষোভ ছিলই। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে ডিএ সংক্রান্ত ঘোষণাটি করার পরে সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপির কর্মী সংগঠন ফের সরকারের নিন্দায় সরব হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘সরকারি অফিসে এসে মানুষকে যেন হয়রানির শিকার হতে না হয়’, নির্দেশ মমতার
সিপিএমের সংগঠন রাজ্য কোঅর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ বলেছেন, ‘‘এটা একটা প্রতারণামূলক ঘোষণা। ছ-সাত মাস আগেই এই ঘোষণাটা হয়েছিল। সেটাই আবার নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বললেন। সব রাজ্য ডিএ-র হার সংশোধন করে দিয়েছে, পে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন বেতনক্রমও চালু করে দিয়েছে। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের সরকার চরম বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছে। ভূভারতে কোথাও এ সব হয় না।’’ বিজয়শঙ্করের হুঁশিয়ারি, ‘‘সামনে ৮-৯ জানুয়ারি তো সারা ভারতে শ্রমিক-কর্মচারীরা ধর্মঘটে যাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গেও ধর্মঘট হবে। রাজ্যের প্রশাসনকে কর্মীরা কী ভাবে স্তব্ধ করে দেবেন, সেটা মুখ্যমন্ত্রী দেখতে পাবেন।’’
কংগ্রেসের সংগঠন কনফেডারেশনের নেতা সুবীর সাহার গলায়ও একই সুর। তিনি বললেন, ‘‘পে কমিশনের সুপারিশ জমা পড়বে, সেই অনুযায়ী নতুন বেতনক্রম কার্যকর হবে, তার পরে আইআর দেওয়া বন্ধ হবে। নিয়ম এটাই। কিন্তু এখানে পে কমিশনের রিপোর্ট কবে জমা পড়বে, কেউ জানেন না। তার আগেই আইআর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনটা আর কোথাও হয় না।’’
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)
বিজেপির সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশিস শীলের কটাক্ষ, ‘‘একটা বিয়ের ছ’মাস আগে কার্ড দিয়ে বিয়েবাড়িতে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করা হল। বিয়ের দিন আবার নতুন করে সেই কার্ডটাই দিচ্ছেন। এ রকম কোথাও হয়! এটা রাজ্য সরকারের প্রতারণা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একে তো নতুন বেতনক্রম আসার আগেই আইআর বন্ধ করে দিচ্ছেন। তা সত্ত্বেও যদি ধরে নিই যে ২৫ শতাংশ হারে ডিএ বাড়ল, তা হলেও তো কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের চেয়ে আমাদের ডিএ ২৩-২৪ শতাংশ কম থাকছে। এ মাসে কেন্দ্র যেই নতুন ডিএ ঘোষণা করবে, সঙ্গে সঙ্গে সেই ফারাক আরও বেড়ে যাবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণা সম্পর্কে তৃণমূলের সংগঠন রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টর গ্রুপের আহ্বায়ক মনোজ চক্রবর্তী কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা চাই রাজ্য সরকার কর্মীদের ডিএ-র বিষয়ে স্থায়ী নির্দেশনামা প্রকাশ করুক। তা হলে আর বছর বছর ডিএ নিয়ে এত টানাপড়েন সহ্য করতে হবে না।’’
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেবাংলায় খবরপেতে চোখ রাখুন আমাদেররাজ্যবিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy