(বাঁ দিকে) সিভি আনন্দ বোস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মী। সেই মামলায় শুক্রবার রাজ্যের উদ্দেশে নোটিস জারি করেছে শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকেও মামলায় যুক্ত করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে মামলাকারীকে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরেই বিবৃতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসু।
সঞ্জয় তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘পদ এবং ক্ষমতা ব্যবহার করে যে যৌন হেনস্থার মতো ঘটনাকে ঢাকা দেওয়া যাবে না, সুপ্রিম কোর্ট সেই মর্মে দিক্নির্দেশ করবে।’’ তিনি এ-ও বলেছেন, ‘‘রাজ্যের উদ্দেশে নোটিস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছিলেন নির্যাতিতা। তার পরবর্তী কালে রাজ্যপাল যে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেগুলি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুধু তা-ই নয়, রাজ্যপালের পদমর্যাদারও অবমাননা করা হয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সঞ্জয়ের বিবৃতিতেও স্পষ্ট যে, সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার যা যা বলেছে, তাকে রাজ্যপাল বনাম নবান্নের লড়াইয়ে ‘ইতিবাচক’ হিসাবেই দেখতে চাইছে রাজ্য সরকার।
সুপ্রিম কোর্টে শুক্রবার ওই মামলাটি প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে ওঠে। মোট তিনটি নির্দেশ দিয়েছে তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের উদ্দেশে নোটিস জারি, কেন্দ্রকে যুক্ত করতে অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি বেঞ্চের নির্দেশ, কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল যাতে এই মামলায় সহযোগিতা করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। গত ২ মে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের অস্থায়ী এক মহিলা কর্মী রাজভবনেই যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগে তদন্ত করা যায় না বলে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি কলকাতা পুলিশ। খাতায়কলমে অভিযোগ দায়ের না হলেও মহিলার বয়ানের ভিত্তিতে ‘অনুসন্ধান’ চালিয়েছে লালবাজার। ডিসি (সেন্ট্রাল) বিষয়টি নিয়ে ‘সক্রিয়’ হন বলেও লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছিল। পুলিশ উদ্যোগী হয়ে রাজভবনের সিসি ক্যামেরার কিছু ফুটেজ সংগ্রহ করে অভিযোগকারিণীর বয়ানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার চেষ্টাও করেছিল। সেই সঙ্গে মহিলাকে পুলিশের কাছে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে রাজভবনের কয়েক জন আধিকারিকের নামে মামলাও রুজু করেছিল পুলিশ। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টের স্থগিতাদেশে সেই তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়।
এর পরেই গত ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন ‘নির্যাতিতা’। শীর্ষ আদালতে করা আর্জিতে অভিযোগকারিণীর আইনজীবীরা সংবিধানের ৩৬১ নম্বর অনুচ্ছেদে রাজ্যপালকে ফৌজদারি, সাংবিধানিক ও দেওয়ানি মামলায় রক্ষাকবচ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। শুক্রবার আদালতে অভিযোগকারিণীর আইনজীবীরা সওয়াল করতে গিয়ে দাবি করেন, গত ২৪ এপ্রিল এবং ২ মে দু’টি ঘটনায় কিছু তথ্য সংগ্রহ করা গিয়েছে। কিন্তু তদন্ত করা যাচ্ছে না। অভিযোগ খুবই গুরুতর। কিন্তু সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদের রক্ষাকবচ রয়েছে। তিন সপ্তাহ পরে আবার এই মামলার শুনানি হবে বলে খবর আদালত সূত্রে।
শীর্ষ আদালতের কাছে অভিযোগকারিণীর আবেদন ছিল, সুপ্রিম কোর্ট যাতে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে কয়েকটি নির্দেশ জারি করে। প্রথমত, জরুরি প্রয়োজনে তদন্তের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যেন রাজ্যপালের বয়ান রেকর্ড করতে পারে। দ্বিতীয়ত, অভিযোগকারিণীকে যেন সুরক্ষা দেয় পুলিশ। তৃতীয়ত, অভিযোগকারিণীর পরিচয় গোপন না-রাখা নিয়ে। উল্লেখ্য, রাজভবনে দরবার বসিয়ে আংশিক সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়েছিলেন স্বয়ং রাজ্যপাল। তাতে তরুণীর পরিচয় প্রকাশ্যে এসেছিল। তরুণীর আর্জি, এর জন্য যেন তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। চতুর্থত, ৩৬১ নম্বর অনুচ্ছেদে থাকা রক্ষাকবচ রাজ্যপাল কতটা ব্যবহার করতে পারেন, তা নিয়ে বিধি তৈরি করুক শীর্ষ আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy