জটিল অস্ত্রোপচার নয়। যন্ত্রণাদায়ক কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপিও নয়। ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করতে সক্ষম এক ধরনের অ্যান্টিবডি। ইমিউনোথেরাপি দিয়ে স্তন ও জরায়ুর ক্যানসার সারানোর চেষ্টা করছেন গবেষকেরা। সেই পথেই নতুন খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি। এমন এক ধরনের অ্যান্টিবডি থেরাপি নিয়ে গবেষণা চলছে, যা স্তন ক্যানসার নির্মূল করতে পারবে বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
কিংস কলেজ অফ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা নতুন এক ধরনের অ্যান্টিবডি থেরাপি নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষক হেথার ব্যাক্স জানিয়েছেন, এত দিন ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি (আইজিজি) অ্যান্টিবডি দিয়ে যে কোনও রোগ সারানোর চেষ্টা হত। কিন্তু আরও এক ধরনের অ্যান্টিবডি আছে যার নাম ইমিউনোগ্লোবিউলিন ই (আইজিই)যেটি ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকেরা।
বিজ্ঞানীরা জানান, স্তন ক্যানসারের সবচেয়ে পরিচিত ধরন— ইআর/পিআর (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) পজ়িটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ। এইচইআর১ ও এইচইআর২ নামক দু’টি জিনই স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী। এর মধ্যে এইচইআর২ জিনটির কারণে ক্যানসার সেরে যাওয়ার পরেও তা ফিরে আসার ঝুঁকি থাকে। এই জিনটিকে কী ভাবে কাবু করা যায়, সে নিয়েই গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই দেখা যায়, যদি ইমিউনোগ্লোবিউলিন ই (আইজিই)অ্যান্টিবডি রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো যায়, তা হলে সেটি সরাসরি ক্যানসারের জিনটিকে আক্রমণ করবে। শরীরের বাকি রোগ প্রতিরোধী কোষগুলিকেও (ইমিউন কোষ)এমন ভাবে সক্রিয় করে তুলবে, যাতে ওই জিনটি আর ক্যানসারের কারণ না হয়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন:
স্তন ক্যানসার গোড়ায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় তা নির্মূল করা সম্ভব অনেক ক্ষেত্রেই। সঠিক সময়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যানসার যেমন সেরে যায়, তেমনই সুস্থ হওয়ার পাঁচ-সাত বছর পর তা আবার ফিরেও আসতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘মেটাস্ট্যাটিক ডেভেলপমেন্ট’ বলা হয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ক্যানসার নিরাময়ের পর প্রথম পাঁচ বছর পর্যন্ত সাধারণত তার ফিরে আসার সম্ভাবনা তেমন থাকে না, তবে এইচইআর২ জিনটি যদি সক্রিয় থাকে, তা হলে রোগ ফিরে আসার ঝুঁকি থেকেই যায়। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি দিয়ে চিকিৎসা করলে ক্যানসার কোষগুলিকে গোড়া থেকে নির্মূল করা সম্ভব বলেও দাবি বিজ্ঞানীদের।
কিংস কলেজ অফ লন্ডনের আরও এক গবেষক সোফিয়া কারাগিয়ান্নিস জানিয়েছেন, কেবল স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় নয়, ওই বিশেষ অ্যান্টিবডিটি আরও নানা ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে। মানুষের শরীরে এই অ্যান্টিবডিটি খুব ভাল কাজ করছে বলেও দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। সব ঠিক থাকলে আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে এই থেরাপিটি বিশ্বজুড়েই ক্যানসার রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।