পঞ্চায়েত এলাকার পর এ বার পুরসভা এলাকাগুলিতেও বস্তিবাসীদের জন্য পাকা বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের আওতায় শহরের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের মাথার উপর ছাদ দেওয়ার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। সম্প্রতি এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা হয়েছে, এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে প্রকল্পটি রূপায়ণের কাজ শুরু করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, আগামী পাঁচ বছরে শুধুমাত্র পুরসভা এলাকাগুলিতে ২ লক্ষ ১০ হাজার পাকা বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহুরে বস্তিবাসীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে আনুমানিক ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা খরচ হবে। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি বাড়ির জন্য দেড় লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। তবে বর্তমানে রাজ্য সরকারের দাবি, কেন্দ্রের কাছে তাদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যা এখনও মেলেনি। রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য অনুযায়ী, কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে। তবে কেন্দ্রের অর্থ সহায়তা পেলে বা না পেলেও, রাজ্য সরকার নিজের উদ্যোগে প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত।
এর আগে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের আওতায় পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি নির্মাণের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১২ লক্ষ মানুষকে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলে এই প্রকল্পের জন্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। এ বার শহরাঞ্চলে এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব পেয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
নবান্নের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দ্রুত গতিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হবে, যাতে শহরাঞ্চলের বস্তিবাসীদের মাথার উপর পাকা ছাদ নিশ্চিত করা যায়। তবে আগামী পাঁচ বছরে ধাপে ধাপে এই কাজ হবে বলে জানিয়েছে নবান্নের একটি সূত্র। যদিও প্রকল্প রূপায়ণে কেন্দ্রের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তবে রাজ্য সরকার নিজস্ব অর্থে উদ্যোগ শুরু করতে প্রস্তুত। এই প্রকল্প ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের তরফে অভিযোগ, কেন্দ্র নির্ধারিত অর্থ না দেওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তবে কেন্দ্রের দাবি, তারা নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ করছে এবং নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না হওয়ায় বকেয়া অর্থ আটকে রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরাঞ্চলে পাকা বাড়ি নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নিম্ন আয়ের বহু মানুষের জন্য বসবাসের পরিবেশ উন্নত হবে। নবান্ন সূত্রের খবর, প্রকল্পের অধীনে আগামী দিনে আরও নীতিগত পরিবর্তন হতে পারে। কেন্দ্র-রাজ্য অর্থনৈতিক সমন্বয় বজায় থাকলে প্রকল্পটি আরও বড় পরিসরে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে। তবে কেন্দ্র অর্থ দিক বা না দিক, শহরাঞ্চলে বাংলার বাড়ি প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজ্য যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে প্রশাসন।