ছবি: সংগৃহীত।
কেন্দ্রীয় সরকারের মঞ্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নিশানা করার ধারাবাহিকতা আজও অক্ষুণ্ণ রইল। গত কাল চাষিদের সঙ্গে বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে ‘পিএম-কিসান’ প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ জম্মু ও কাশ্মীরে ‘আয়ুষ্মান ভারত সেহৎ’ যোজনার উদ্বোধনে সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিলেন তিনি। তৃণমূলও পাল্টা পরিসংখ্যান তুলে ধরে মোদীর অভিযোগের মোকাবিলা করেছে।
গত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের সঙ্গে রাজ্যের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের ‘দ্বন্দ্ব’ চলছে। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প কেন পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হয়নি, তা নিয়ে লোকসভা ভোটের প্রচারে সরব হয়েছিলেন মোদী। এ বার বিধানসভা ভোটের পারদ চড়তে না-চড়তেই সেই প্রসঙ্গ ফিরে আসছে। সম্প্রতি দু’দিনের রাজ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ নিয়ে রাজ্যের সমালোচনা করেছিলেন। শনিবার রাজ্য থেকে বহু দূরে দাঁড়িয়েও সেই প্রসঙ্গ তুললেন প্রধানমন্ত্রী।
জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের উদ্দেশে আজ মোদী বলেন, “আপনারা যদি মুম্বই অথবা চেন্নাইয়ে যান, হঠাৎ প্রয়োজন পড়ে, তা হলে সেখানকার কিছু হাসপাতালে কেন্দ্রীয় যোজনার এই কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে পারবেন। কিন্ত কলকাতায় গেলে পারবেন না। কারণ সেখানকার রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে যুক্ত হয়নি।’’ এর পরেই মমতার নাম না-করে তাঁর কটাক্ষ, “কিছু কিছু লোক এমনই, কী আর করা যাবে!”
প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরেই আসরে নামে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েন টুইট করেন, ‘নরেন্দ্র মোদীজি আপনার কি জানা আছে, স্বাস্থ্যসাথী কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত নয়। আপনি কিছু মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন। বাংলা দিচ্ছে রাজ্যের ১০ কোটি মানুষকে।’ এর পর একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দেখানো হয়েছে, ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর থেকে রাজ্যের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ যোজনা কত বেশি কার্যকর।
দু'বছর আগে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি, কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বাংলার বাড়তি কিছু পাওয়ার নেই। কারণ, ২০১৬ সালে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প শুরুর পরে ধাপে ধাপে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে এর আওতায় আনা হয়েছিল। এখন রাজ্যের সব বাসিন্দার জন্যই এই প্রকল্প খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, ‘আয়ুষ্মান’ প্রকল্প গ্রহণ করলে কমবেশি দেড় কোটি মানুষকে সুবিধা দেওয়া যেত।
তা ছাড়া, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের পুরো ব্যয়ভারই রাজ্য বহন করে। কিন্তু ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এ কেন্দ্র ৬০ শতাংশ টাকা দেয়। শাহের তোলা অভিযোগের জবাব দিয়ে গত সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “১০ কোটি মানুষের জন্য পুরোপুরি নিজেদের খরচে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প করেছি। দেড় কোটি লোকের জন্য ওদের প্রকল্প। তাতে ৬০ ভাগ টাকা কেন্দ্র দেবে, ৪০ ভাগ টাকা আমাদের দিতে হত।” রাজ্যের দাবি, সকলকে সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যেই কেন্দ্রের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি।
নবান্ন সূত্রের আরও বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় যথেষ্ট ভাল। এখানে এমনিতেই সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার উপরে প্রায় দেড় হাজার বেসরকারি হাসপাতাল ‘স্বাস্থ্যসাথী’-র তালিকাভুক্ত হয়েছে। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস, ভেলোর সিএমসি-এর মতো জায়গাতেও এখন ‘স্বাস্থ্যসাথী’-র সুবিধা পাওয়া যাবে। এই প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণও এক হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে দু’হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জিতিনের দাবি
গত ১ ডিসেম্বর থেকে রাজ্য জুড়ে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চলছে। তাতে চাহিদার নিরিখে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পই শীর্ষে। গত ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের সুবিধা চেয়ে ৪২.৪১ লক্ষ মানুষ আবেদন করেছিলেন। তার মধ্যে ২৭.১৩ লক্ষ আবেদনপত্র মঞ্জুর হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy