গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার শাসক দল। রাতে বাড়িতে বোমা পড়ছে নেতাদের। তাঁদের বাঁচাতে বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত মোতায়েন করা হচ্ছে নদিয়ার শান্তিপুর থানার প্রায় অর্ধেক সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে। আর তা করতে গিয়ে ফাঁক তৈরি হচ্ছে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায়।
শান্তিপুর পুরসভার কাউন্সিলরদের সকলের বাড়ি তো বটেই, বিধায়কের বাড়ির সামনেও পাহারা বসেছে। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন, শাসকদলের এমন কিছু নেতার বাড়ির সামনেও অষ্টপ্রহর প্রহরা। শান্তিপুর থানা সূত্রের খবর, তাদের ২৪৭ জন সিভিক ভল্যান্টিয়ারের মধ্যে ১২০ জনকেই এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। রোজ বিকেল পাঁচটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পাহারায় থাকছেন দু’জন সিভিক ভল্যান্টিয়ার, তার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অন্য দু’জন।
গত কিছু দিন ধরেই শান্তিপুরের দীর্ঘদিনের নেতা তথা পুরপ্রধান অজয় দে-র সঙ্গে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের টিকিটে জিতে তৃণমূলে চলে আসা বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের গোষ্ঠীর লোকেদের বারবার কোন্দল, এমনকী সংঘর্ষ বাধছে। কিছু দিন আগেই অজয় দে প্রভাবিত দলীয় কার্যালয়ের সামনে আক্রান্ত হন অরিন্দমের ঘনিষ্ঠ ইয়ার আলি মল্লিক। ওই রাতেই অজয় দে-র ছায়াসঙ্গী তথা উপ-পুরপ্রধান আব্দুর সালাম কারিগরের বাড়িতে বোমা পড়ে। ক’দিনের মধ্যে অজয়-ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর প্রশান্ত বিশ্বাসের বাড়িতে ইট মারা হয়। তার রেষ না মিটতে অরিন্দম-ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর সুব্রত ঘোষের বাড়িতে বোমা পড়ে।
অজয় বা অরিন্দমের বাড়িতে তো বটেই, পাহারা বসেছে উপপ্রধানের বাড়ির সামনেও। অরিন্দমের সঙ্গেই দল পাল্টে তৃণমূলে এসেছিলেন কিছু লোকজন। যেমন অজয় দে-র বিরুদ্ধে উপনির্বাচনে পরাজিত কংগ্রেস প্রার্থী কুমারেশ চক্রবর্তী বা সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত শান্তিপুর শহর-২ লোকাল সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও বহিষ্কৃত সদস্য সুব্রত কর। এঁদের বাড়িতেও পাহারা রয়েছে। রয়েছে শান্তিপুর যুব তৃণমূল সভাপতি জয়ন্ত ঘোষের বাড়ির সামনেও।
শান্তিপুর পুরসভার ২৪টি আসন, একটি বাদে সবই তৃণমূলের। বাকি এক কাউন্সিলর, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সৌমেন মাহাতোর বাড়ির সামনেও রয়েছে প্রহরা। যদিও তাঁর দাবি, ‘‘আমার বাড়ির সামনে কখনও পাহারাদার চোখে পড়েনি। দরকারও নেই। আমাদের আমলে কারওরই পাহারার দরকার ছিল না।’’
অজয়-অরিন্দম দু’জনেরই দাবি, দলে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। তবে অজয় বলেন, “কোনও একটা শক্তির হাত ধরে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ সকলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুক।” অরিন্দমের পাল্টা বক্তব্য, “আমরা মনে হয় না, শহরে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
প্রায় অর্ধেক সিভিক ভল্যান্টিয়ার নেতাদের বাড়ির সামনে মোতায়েন থাকায় রাতে বিভিন্ন মোড়ে বা বাজার এলাকায় পাহারা থাকছে না। কেবল পুলিশের টহল-গাড়ি সম্বল। শহরের বাসিন্দা সত্যনারায়ণ গোস্বামী, সঞ্জিত কাষ্ঠরা বলছেন, “জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই যদি এত পাহারা দিতে হয়, সাধারণ মানুষের কী অবস্থা, বুঝুন!”
নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া অবশ্য বলেন, “সকলের নিরাপত্তার জন্য যা করার, সেটাই হচ্ছে। আলাদা কিছু করা হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy