হোমের শিশু দত্তক দেওয়া বাবদ ঠিক কত লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে, তার হিসেব কষতে হিমশিম খাচ্ছে সিআইডি। তদন্তকারীদের অনুমান, অবৈধ ভাবে যে পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়েছে তার বেশির ভাগই ব্যাঙ্কে রাখা হয়নি। তবে বিভিন্ন নামের চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপরে নজর রেখেছে সিআইডি। সেগুলো থেকে প্রায় ১ কোটি টাকার কাছাকাছি লেনদেনের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। জলপাইগুড়ির ওই হোমটির দত্তক দেওয়ার লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে।
৯ বছর আগে দত্তক দেওয়ার লাইসেন্স পায় জলপাইগুড়ির হোমটি। তখন থেকে অন্তত ৯০টি শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। লেনদেনের সূত্রেই সিআইডির সন্দেহ জোরদার হয়েছে। বিদেশে চার শিশুকে দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে আগাম টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে সিআইডি জানতে পেরেছে। তবে ওই শিশুদের দত্তক দেওয়ার জন্য হোম যে নথি তৈরি করেছিল, তা জাল বলে দাবি। তার পরেই হোমের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তী এবং ওই হোমের দত্তক বিষয়ক আধিকারিক সোনালি মণ্ডলকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয় সিআইডি।
তদন্তকারীদের দাবি, সরকারি আধিকারিকদের একাংশের মদত না থাকলে দত্তক দেওয়ার ভুয়ো নথি তৈরি সম্ভব নয়। ওই আধিকারিকদের দ্রুত জেরায় ডাকা হবে। ইতিমধ্যে চন্দনারই আরেকটি হোমে মঙ্গলবার রাতে হানা দেয় প্রশাসন। ওই হোমে থাকা পাঁচ মহিলা আবাসিকের খোঁজ মেলেনি। আবার, বয়স্কদের হোম থেকে খোঁজ মিলেছে নাবালিকাদেরও।
সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সিআইডির হাতে চারটি শিশু বিক্রির তথ্য এসেছে। ওই শিশুগুলিকে জাল নথি তৈরি করে বিক্রি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক খরচ হিসেবে আবেদনকারীদের থেকে সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার টাকা নিতে পারে সংস্থা। তবে কালিম্পঙের এক আবেদনকারীর কাছ থেকে ৪ লক্ষ এবং কোচবিহারের এক দম্পতির থেকে ১ লক্ষ টাকা সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে বলে দাবি সিআইডি-র। ওই দুই অ্যাকাউন্টের নথিও সংগ্রহ করেছে সিআইডি। অতিরিক্ত টাকাটা নেওয়া হয়েছিল নিয়ম ভেঙে দত্তক দেওয়ার জন্য। ধৃতদের আইনজীবী গৌতম পালের পাল্টা দাবি, ‘‘যে অনিয়মের কথা বলা হচ্ছে, তা সবই সিআইডিকে প্রমাণ করতে হবে।’’ সরকারি আইনজীবী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রমাণ হাতে এসেছে বলেই অভিযুক্তদের ধরা হয়েছে। একেবারে প্রথম থেকে ওই হোম থেকে যত শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়েছে, সে সব তথ্য যাচাই করছে সিআইডি।’’
কোনও শিশুকে দত্তক দিতে হলে প্রথমে শিশু কল্যাণ সমিতিকে (সিডব্লুসি) জানাতে হয়। সিআইডি-র দাবি, সিডব্লুসি-র অনুমতি ছাড়াই ১৪টি শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়েছে। সিডব্লুসি-র দেওয়া এলএফএ শংসাপত্র ছাড়া দত্তক দেওয়া আইনত সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে দত্তক দেওয়া হল? তদন্তে জানা গিয়েছে কিছু ক্ষেত্রে সিডব্লুসির সদস্যদের সই জাল করা হয়েছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে এক সরকারি আধিকারিক সিডব্লুসি-র হয়ে সই করেছিল। ওই আধিকারিকের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে সিআইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy