Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
আজ রাজ্যপালের কাছে মানসরা

সবংয়ে ছাত্র খুনে ফের ধৃত সিপি সদস্য

সবং কলেজে ছাত্র পরিষদ (সিপি) কর্মী খুনে ফের সিপি-র এক সদস্যকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সুদীপ পাত্র নামে সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রকে সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় তলব করা হয়েছিল।

ছাত্র পরিষদ সদস্য সুদীপ পাত্র। মঙ্গলবার মেদিনীপুর আদালতে রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

ছাত্র পরিষদ সদস্য সুদীপ পাত্র। মঙ্গলবার মেদিনীপুর আদালতে রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪৩
Share: Save:

সবং কলেজে ছাত্র পরিষদ (সিপি) কর্মী খুনে ফের সিপি-র এক সদস্যকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সুদীপ পাত্র নামে সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রকে সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় তলব করা হয়েছিল। রাতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার সুদীপকে মেদিনীপুরের সিজেএম আদালতে হাজির করা হলে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়।

কলেজ চত্বরে ওই খুনের ঘটনায় আগেই পল্টু ওঝা নামে সিপি-র এক কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এ বার সুদীপকে ধরায় ফের সরব হয়েছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, মামলা সাজাতেই পুলিশ এ সব করছে। সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘সে দিন প্রথম কলেজে গিয়েছিল সুদীপ। ছেলেটাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হল। পুলিশ চাইছে সবংয়ে আগুন জ্বালাতে, মানস ভুঁইয়াকে, কংগ্রেসকে খতম করতে।’’ সবংয়ে ছাত্র খুন নিয়ে কথা বলতে আজ, বুধবার রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির সঙ্গে দেখা করবেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। থাকবেন মানস ভুঁইয়া, সোমেন মিত্র, আব্দুল মান্নান।

সিপি-র সদস্য সুদীপের গ্রেফতার নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। তবে পুলিশ সূত্রের দাবি, কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে গোলমালের সময় সুদীপকে দেখা গিয়েছে। সুদীপের বাবা তাপস পাত্র যদিও বলেন, ‘‘আমার ছেলে ঘটনার দিন ফি-বুক আনতে কলেজে গিয়েছিল। গোলমালে ছিল না।’’ সিপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি মহম্মদ সইফুলেরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের সমর্থক বলেই সুদীপকে ধরা হয়েছে।’’

এ দিন সন্ধ্যায় আবার পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সবং কলেজে গিয়েছিল। ছিলেন খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত, এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল। স্থানীয় সূত্রের খবর, অধ্যক্ষ কানাইলাল পড়িয়ার সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ সুপার। ঘটনার দিন অধ্যক্ষ কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন জানতে চাওয়া হয়। ছাত্র সংসদের ঘরে কী ভাবে লাঠি মজুত হল তা-ও অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয় বলে খবর। তদন্তের প্রয়োজনে কলেজ চত্বরে মাপজোক করা হয়। তবে জেরা নিয়ে অধ্যক্ষ কিছু বলতে চাননি।

অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া পুলিশ কী ভাবে কলেজে এল, কেনই বা সন্ধ্যার পরে কলেজে এল, এই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, তদন্তের কারণেই এ দিন ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়েছিল। আর সন্ধ্যায় যাওয়ার কারণ হল, কলেজ চলাকালীন গেলে সমস্যা হতে পারত। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। কলেজের প্রধান হিসেবে অধ্যক্ষ সেখানে ছিলেন।’’

গত ৭ অগস্ট সবং কলেজে সিপি কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) তিন জনকে ধরেছিল পুলিশ। কিন্তু ঘটনার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত করেন, ঘটনাটি সিপি-র অন্তর্দ্বন্দ্বের জের। তারপর থেকে জেলার পুলিশ সুপার সেই তত্ত্বে সিলমোহর দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ। কারণ, ভারতীদেবী দাবি করেছেন, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং সেই অনুযায়ী সবংয়ের ঘটনাটি সিপি-র নিজেদের মধ্যে অশান্তিরই জের।

ইতিমধ্যে সিপি কর্মী পল্টু ওঝাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারপর সিপি-র ১২ জনকে নোটিস পাঠিয়ে সোমবার মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। ওই তালিকায় নাম ছিল সুদীপের। গোড়ায় কেউই থানায় যাননি। সিপি-র তরফে ঘটনার তদন্তকারী অফিসারকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, সবং থানায় বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে পুলিশ জেরা করুক। রাতে অবশ্য বাবাকে নিয়ে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় আসেন সবংয়ের লুটুনিয়ার বাসিন্দা সুদীপ। এর আগে নোটিস পাঠিয়ে ১৯ অগস্টও তাঁকে এক বার কোতোয়ালি থানায় ডেকে পাঠিয়েছিল পুলিশ। তবে ওই দিন সুদীপ যাননি।

সবং কলেজের যে শিক্ষক দ্বিতীয় বার গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়েছিলেন, তিনি এ দিন মেদিনীপুরের এসিজেএম (৫ম) আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ, বুধবার শেখ মুন্না-সহ খুনের ঘটনায় ধত টিএমসিপি-র তিন জন এবং সিপি-র পল্টুকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করানো হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE