মঙ্গলবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছন সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ডিরেক্টর আর কে আস্থানা। —নিজস্ব চিত্র।
সারদা-নারদ-রোজভ্যালি, রাজ্যের এই তিনটি হাই-প্রোফাইল সিবিআই মামলা ঘিরে গত বেশ কয়েক মাস ধরেই চলছে অচলাবস্থা। বহু আলোচিত এই মামলাগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে খোদ সিবিআই কর্তারাই। অথচ, সিবিআইয়ের তরফে এ রাজ্যের বাকি প্রায় ৫০টি চিট-ফান্ড মামলা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও সারদা-রোজভ্যালি এখনই গোটাতে রাজি নন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্তারা।
কিন্তু এই মামলাগুলির তদন্ত কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে? বুধবার সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ডিরেক্টর আর কে আস্থানা এই মামলাগুলি নিয়ে কী দাওয়াই দেবেন? তাই নিয়েই কলকাতার সিবিআই আধিকারিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও শুরু হয়েছে জল্পনা। সেই জল্পনা থেকে বাদ নেই সিজিও কমপ্লেক্সের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অফিসও। কারণ এই সব ক’টা মামলায় সিবিআইয়ের সঙ্গে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি-ও। আর তাই ইডি কর্তাদেরও যথেষ্ট আগ্রহ সিবিআই স্পেশ্যাল ডিরেক্টরের বুধবারের বৈঠক নিয়ে।
সারদা মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিকের দাবি, “সারদা মামলার তদন্ত কার্যত শেষ পর্যায়ে। এখন ফাইনাল চার্জশিট জমা দেওয়াই যায়।” এই মর্মে দু’মাস আগে একটি রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছিল সিবিআই সদর দফতরে। যদিও রোজভ্যালির তদন্তকারীরা এতটা ভাল অবস্থায় নেই। এক সিবিআই আধিকারিক বলেন, “রোজভ্যালি তদন্ত সিবিআইয়ের অনেক আগে শুরু করেছিল ইডি। তাঁদের তদন্তের উপর ভিত্তি করেই এগিয়েছিল সিবিআই। তাঁরা এই তছরুপের ঘটনায় ষড়যন্ত্রের অংশটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রোজভ্যালির তদন্তের মাঝপথেই ইডি-র তদন্তকারী অফিসার মনোজ কুমার নিজেই গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় সেই তদন্তই আটকে যায়। সেই তদন্ত পরবর্তী সময়ে খুব একটা এগোয়নি।” তবে ওই গোয়েন্দা কর্তা স্বীকার করেন যে, রোজভ্যালি তদন্ত এখনও অনেকটা বাকি। সেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে বারে বারে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে সিবিআই। কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে রোজভ্যালির বাজেয়াপ্ত হার্ডডিস্ক পাওয়া দূরে থাক, উল্টে কলকাতা পুলিশ মামলার তদন্তকারী অফিসারকে বার বার হেনস্থা করেছে। এই মামলায় আরও বেশ কয়েক জন রাজনৈতিক এবং ব্যাবসা জগতের প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে তদন্তে। তাঁদের জেরার ব্যাপারেও দিল্লির তরফে উৎসাহ প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পডুন
সিবিআই কর্তা শহরে কেন, জল্পনা তুঙ্গে
সেই একই সমস্যা সারদা-র ক্ষেত্রেও। সেখানেও মামলার তদন্ত শেষ করতে গেলে কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমার, রাজ্য পুলিশের এক পুলিশ সুপার পদমর্যাদার অফিসারকে অবিলম্বে জেরা করা দরকার। এক সিবিআই তদন্তকারী বলেন, “আমরা রাজীব কুমারকে দু’বার সমন পাঠিয়েছিলাম। তিনি আসতে অস্বীকার করেছেন।” রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভবনা থাকায় এর পরবর্তী পদক্ষেপ করার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত মেলেনি নয়াদিল্লি থেকে।
সব শেষে নারদ মামলা। সেখানে জটিলতা আরও বেশি। সেখানে এক দিকে রয়েছে মামলার মূল ভিত্তি যে ভিডিয়ো ফুটেজ, সেই ফুটেজ নিয়ে জটিলতা। তার সঙ্গে রয়েছে আইনি জটও। সেই পরিস্থিতিতে নারদ মামলা এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবিলম্বে তৃণমূল সাংসদ কেডি সিংহকে জেরা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। সেই ব্যাপারেও এখনও অনুমতি মেলেনি দিল্লি থেকে। মে মাসের ১৭ তারিখ এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে স্পেশ্যাল ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়েছিলেন মামলার তদন্তকারী অফিসার। তার পর তদন্তকারী অফিসারকে ডেকে পাঠানো হয় দিল্লিতেও। কলকাতায় সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই তিন মামলার এই খুঁটিনাটি জানিয়ে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন পঙ্কজ শ্রীবাস্তব।
সেই স্ট্যাটাস রিপোর্ট পাওয়ার পরই স্পেশ্যাল ডিরেক্টরের হঠাৎ কলকাতায় আসা নিয়ে তাই জল্পনা রয়েছে। সিবিআইয়ের সদর দফতর যদিও বুধবারের বৈঠককে রুটিন বলে দাবি করেছে। তাঁরা উদাহরণ দিয়েছেন যে কলকাতার পৌঁছনোর আগে ভুবনেশ্বরে মঙ্গলবার মিটিং করেছেন আস্থানা। তাই জল্পনার বিশেষ অবকাশ নেই।
সকাল দেখে বাকি দিনের আঁচ পাওয়া যায়— এই আপ্ত বাক্য যদি সঠিক হয়, তবে আস্থানার এই ঝটিতি সফর মোড় ঘোরাতে পারে এই তিন মামলার গতি প্রকৃতির। প্রথমে ঠিক ছিল ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় এসে তিনি বিশ্রাম করবেন। আগামিকাল বুধবার নিজাম প্যালেসে বৈঠক করবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সিবিআইয়ের এই দু’নম্বর কর্তা বিমানবন্দর থেকে ডিআইজি অভয় সিংহকে সঙ্গে নিয়ে সোজা সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে চলে আসেন। সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন বিভিন্ন তদন্তকারীর সঙ্গে। সিবিআই সূত্রে খবর, এই সময়ে তিনি সারদা সংক্রান্ত কয়েকটি ফাইল দেখেন। আর সঙ্গে খবর নেন, সারদা নিয়ে রাজ্য পুলিশের সিটের দেওয়া তথ্যর বিষয়ে। সরাসরি তদন্তকারীদেরই প্রশ্ন করেন তাঁরা সিটের দেওয়া তথ্যে আদৌ সন্তুষ্ট কি না?
সিটের দেওয়া তথ্য যে পর্যাপ্ত নয়, সে কথা জানার পর তিনি তদন্তকারীদের ফের সিটের সদস্য রাজ্য পুলিশের দুই আধিকারিক শঙ্কর ভট্টাচার্য এবং দিলীপ হাজরাকে সমনের নির্দেশ দেন। তাঁর গতি দেখে সিবিআই কর্তাদের একাংশের ইঙ্গিত, বুধবার এই তিন মামলা নিয়ে অনেকটা সময় খরচ করবেন আস্থানা। আর মঙ্গলবার বিকেলের বৈঠক যদি ইঙ্গিত হয়, তবে কলকাতার সিবিআই কর্তাদের আশা, আর কে আস্থানার বৈঠকের পর তিনটি মামলাতেই গতি আসবে। তাঁদের ইঙ্গিত, রোজভ্যালি তদন্তে উঠে আসা হোমরাচোমরাদের জেরা করা বা রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি তদন্তের পরোয়া না করে এ বার রাজীব কুমারকে জেরা করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বুধবারই জানিয়ে যাবেন আস্থানা।
আরও পড়ুন: মৃতদের বাড়ি যেতে ‘ভয়’ পাচ্ছেন অমিত: পার্থ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy