রাজ্যে ‘রাজধর্ম’-এরও পরীক্ষানিরীক্ষা করতে চায় দেশের হিসাব পরীক্ষক সংস্থা কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া (সিএজি)! এতে তীব্র আপত্তি নবান্নের।
রাজ্যের অন্যতম অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (এজি) নমিতা প্রসাদ সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে চিঠি দিয়ে জানান, সিএজি রাজ্যের ‘পাবলিক অর্ডার’-এর অডিট করতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও তার পরিসংখ্যান রক্ষণাবেক্ষণ এবং আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়। প্রাথমিক ভাবে রাজ্য সিএজি-র প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এজি ফের নবান্নকে জানান, ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, কেরল, অসম এবং মণিপুর ‘পাবলিক অর্ডার’-এর এই পরীক্ষণ প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। সেই কাজ শুরুও হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার কিমি আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও এই অডিট করা জরুরি।
নবান্নের খবর, স্বরাষ্ট্র দফতর এখনও সিএজি-র প্রস্তাবে রাজি নয়। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। সিএজি এ নিয়ে হিসেব চাইতে পারে না। তা ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণের অডিট করা আর কোনও প্রকল্প বা সরকারি অ্যাকাউন্টের অডিট করা এক জিনিস নয়। সিএজি-কে এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলায় নাক গলাতে দেওয়া হবে না।’’
রাজ্যের এক শীর্ষ কর্তাও বলেন, ‘‘কেন ওরা আইনশৃঙ্খলার মতো বিষয়ে ঢুকতে চাইছে, তা ওদের ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছিল। সেই ব্যাখ্যায় আমরা সন্তুষ্ট নই। তাই ওদের অ়ডিট করতে দেব না।’’
আরও পড়ুন: জাতীয় প্রতিযোগিতা বর্জনেই আগ্রহী বঙ্গ!
যদিও সিএজি-র এক মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘সংবিধানের ১৪৮, ১৪৯, ১৫০ এবং ১৫১ ধারায় কেন্দ্র বা রাজ্যের যে সব ক্ষেত্রে সরকারি অর্থ ব্যয় হয়, সিএজি তার অডিট করতে পারে। ১৯৭১ সালে তৈরি সিএজি আইনেও কোনও সরকারি সংস্থার ‘এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড পারফরম্যান্স অডিট’-এর কথা বলা রয়েছে। ফলে আমরা রাজ্যের ‘পাবলিক অর্ডার’ পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখতেই পারি।’’
কলকাতা ও বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রক্রিয়াটি কিঞ্চিত ধূসর বলে মনে হচ্ছে। তবে সৎ উদ্দেশ্যে অডিট করার প্রস্তাব দেওয়া হলে আপত্তির কিছু নেই। যেখানে সরকারি টাকা ব্যয় হচ্ছে, সেখানে স্বচ্ছতার প্রশ্নেই অডিট করা যেতে পারে।’’
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয় ঠিকই, কিন্তু ‘পাবলিক অর্ডার’ পুরোপুরি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। এর পরিসর বৃহত্তর। পুলিশের আধুনিকীকরণের জন্য দিল্লি টাকা দেয়, আইপিএস অফিসারদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। দাঙ্গা হলে, খাগড়াগড়ের মতো বিস্ফোরণ হলে বা অনুপ্রবেশ হলে কী ভাবে তাঁরা কাজ করছেন, তা সিএজি দেখতেই পারে।’’
নবান্নের প্রশ্ন, আইনশৃঙ্খলার যাচাই হবে কী ভাবে? সিএজির এক কর্তা জানান, দাঙ্গা পরিস্থিতি, আইন অমান্য, বিক্ষোভ দমন, গুলি চালানোর ঘটনার ক্ষেত্রে কেন্দ্র বা রাজ্যের নিজস্ব স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) রয়েছে। সিএজি অডিটের সময় শুধু দেখতে চায়, সেই এসওপি মেনে পুলিশ বা সরকার কাজ করেছে কি না। একই ভাবে অপরাধ দমন বা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়েও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে। এ ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। সিএজির এক কর্তার কথায়, ‘‘খুনকে আত্মহত্যা বা আত্মহত্যাকে খুন দেখানো হচ্ছে কি না, ডাকাতিকে চুরি দেখানো হচ্ছে কি না, মাদকের মামলা কতটা আসল তা দেখার অধিকার সিএজি-র রয়েছে।’’
যা মানতে রাজি নয় নবান্ন। রাজ্যের পাল্টা প্রশ্ন, আইনশৃঙ্খলার মতো স্পর্শকাতর বিষয় কেন সিএজি-কে দেখতে দেওয়া হবে? সিএজি-র এক কর্তার জবাব, ‘‘আমরা দেশের পরমাণু প্রতিরোধ কর্মসূচিরও অডিট করেছি। ডুবোজাহাজ কেনার পরিকল্পনারও অডিট করা হয়েছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা কি তার চেয়েও স্পর্শকাতর?’’
রাজ্যের এক শীর্ষ কর্তার অবশ্য অভিযোগ, ‘‘আসলে সিএজি-র মাধ্যমে রাজ্যের অধিকারে নাক গলাতে চাইছে কেন্দ্র। সেই কারণেই ‘পাবলিক অর্ডার’-এ নজর তাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy